নিজস্ব প্রতিবেদন:
এবার ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে এমপির কোনো আত্মীয় কিংবা ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এমন কাউকে প্রার্থী না করার। কিন্তু নরসিংদী পলাশ ২ এবং শিবপুর ৩ আসনে এমপির পরিবারের সদস্যদের প্রার্থীতা নিয়ে চলছে জেলা জুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
নরসিংদী পলাশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ এর সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) শরিফুল হকও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চাচ্ছেন। করছেন গণসংযোগ। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালায় সংসদ সদস্যকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে হয়ে কাজ না করার বিধি-নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। উল্টো ভোটারদেরকে তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নানা-ধরনের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
পলাশ উপজেলা পরিষদের নিবার্চনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ এর সম্বন্ধী শরিফুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচন অংশগ্রহণ করছেন। সংসদ সদস্যের বিশাল বাহিনী তার নির্বাচনীয় প্রচারে কাজ করছে। বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকিসহ আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করছে। আমার নেতাকর্মীদেরকে হুমকি দিচ্ছে- এমপির হয়ে কাজ না করলে তাদেরকে উপজেলা থাকতে দেওয়া হবে না। এমন অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে আমি পড়েছি মহাসংকটে। এমপির হস্তক্ষেপের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সেটা নিয়ে আমি সংশয়ে দিন পার করছি। প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের প্রচার করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে এমপির সম্বন্ধী চেয়ারম্যান প্রার্থী শরিফুল হক বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি। এরকম আমি পৌরসভার মেয়র ছিলাম। আমার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। কারো সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে আমি কাজ করি না।
অপরদিকে নরসিংদীর-৩ শিবপুর আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সহধর্মিণী ফেরদৌসী ইসলাম চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার ব্যানার পোস্টারসহ গণসংযোগে কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় এমপি। এতে করে দীর্ঘদিন যাবত উপজেলায় আওয়ামী লীগ করে ত্যাগী নেতারা এমপি স্ত্রীর প্রভাবে অনেকটাই কোন ঠাসা হয়ে পড়েছেন। এনিয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে শিবপুরে। নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগেই এই উত্তাপ ইস্যুতে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বিধাবিভক্তি তৈরি হয়েছে সাধারণ ভোটার ও প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মধ্যে। নেপথ্যের মূল কারণ একজন প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় এমপির সরাসরি হস্তক্ষেপে। এমপির স্ত্রীর প্রার্থী হওয়া ইস্যুতে সেখানে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও অন্য প্রার্থীরা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শামসুল আলম ভূইয়া রাখিল বলেন, দীর্ঘ ৪৩ বছরের উপর আওয়ামী লীগ করে আসছি। বর্ণাঢ্য এই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আওয়ামী লীগের জন্য বহু, ত্যাগ-তিতিক্ষা কষ্ট করেছি। প্রতিটা লড়াই সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে মাঠে ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন আমরা প্রকৃত আওয়ামী লীগাররাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছি স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপে। উনার স্ত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উনি যেকোন মূল্যেই হোক স্ত্রীকে বিজয়ী করবেনই। বর্তমান এমপির নির্বাচনীয় মাঠে প্রচার রচনা করছে। এতে করে আমার নেতাকর্মীরা অনেকটাই আতঙ্কে মধ্যে রয়েছে। আদৌ কি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগের জন্য এতো ত্যাগ তিতিক্ষার করার ফল কি আমরা পাবো?
অপরএকজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নির্বাচনী মাঠে নেমেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়। সাধারণ মানুষ আছে আতঙ্কের মধ্যে। নির্বাচনে এমপির স্ত্রীর বিপক্ষে লড়াই করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। আমরা চাই অবাক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন হোক উপজেলায়।
এ বিষয়ে শিবপুর উপজেলা সংসদ এপির স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বলেন, আমি আমার নিজ যোগ্যতা নির্বাচনী মাঠে থাকবো। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। সাধারণ মানুষের উন্নয়নে তাদের পাশে থাকতে চাই। এটাই আমার বড় পরিচয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন রহমান, মোহাম্মদ মাহফুজ, খোকন চন্দ্র সরকারসহ একাধিক মানুষ বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে চাই নির্বিঘ্নে। কিন্তু সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা সেটা নিয়েই আমরা দুশ্চিন্তায়। যে জায়গায় এমপির আত্মীয়-স্বজন নির্বাচনী মাঠে। সে জায়গায় আমাদের কি কোন ভোট দেয়ার কোন দরকার আছে আদৌও। কারণ এমপির উপরে উপজেলায় তো আর কিছু হয় না। জোর করে হোক ছিনিয়ে হোক তারাই নির্বাচিত হবে। তাহলে আমরা সাধারণ মানুষরা কষ্ট করে ভোট দিতে যাব কেন। আমরা মূলত সাধারণ ভোটারদের চাওয়া একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য এবং প্রভাব মুক্ত নির্বাচন যাতে কোন প্রভাব ছাড়া নিজের ভোট দিতে পারি।
এ বিষয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে এই নির্দেশনা আমি শুনতে পেয়েছি। কিন্তু আমাকে কোন কাগজ বা চিঠি ইস্যু করা হয়নি। তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবো না।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত। ভোটের দিন পুরো উপজেলা নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো থাকবে। সুষ্ঠু ভোট প্রদানে কেউ বাধা প্রদান করলে সঙ্গে সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিবে। আমরা এখন কাউকে চিনি না। আমাদের কাছে সবাই সমান।