মো.রকিবুল হাসান বিশ্বাস,সিংগাইর(মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ১নং অফিস, জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে । উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. আতোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ মামলা দায়ের করেন । মামলায় আসামি করা হয়েছে বায়রা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ বাইমাইল গ্রামের নূরু কারিকরের পুত্র সেলিম (৫০),সেলিমের পুত্র পলাশ (২৩), সিরাজের পুত্র শামীম (২২), মোসলেমের পুত্র সবুজ (২৪)ও দুলাল চৌকিদারের পুত্র সজিবকে(২৩)। এরা সকলেই বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী সমর্থক বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে । গত ৫ দিনেও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠেছে ।
সরেজমিন রবিবার (১৪ জুলাই)এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে ও মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, তেলিখোলা(তালতলা) গ্রামে ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ১নং কার্যালয় রয়েছে । সেখানে তৃনমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রতিদিনই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। গত ৭ জুলাই রাত নয়টার দিকে অফিস বন্ধ করে যার যার মতো বাড়ি চলে যান। রাত পৌনে ১১ টার দিকে উল্লেখিত আসামীরা দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে অফিসের দরজা ভেঙ্গে টিনের বেড়া কেটে ভেতরে ঢুকে টিভি,সাউন্ড সিস্টেম,ফ্যান,চেয়ার-টেবিল ভাঙ্চুর করে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন করে। সেইসঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবির ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং উপজেলা আ:লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি অবমাননা করা হয়। এ সময় টেবিলের ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে মূল্যবান কাগজপত্র ও আগামী ১৫ আগস্ট জাতির পিতার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের জন্য ড্রয়ারে রাখা নগদ টাকা লুটে নেয়। ভাঙচুরের শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামীরা চলে যায়। খবর পেয়ে রাতেই প্রশাসনের লোকজন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আসামীরা বায়রা ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থক। তারা আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয় ।
স্থানীয় আলমাছ আলী, আব্দুল মালেক,সেলিম হোসেন, সফিকুল ইসলাম ও মাশরাফ হায়দারসহ অনেকেই বলেন,বাইমাইল গ্রামের সেলিমের শেল্টারে ছেলে পলাশ রাতের আঁধারে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আ: লীগ অফিস ভাঙচুর করেছে বলে শুনেছি । পলাশ একাধিক মামলার আসামি,এলাকার দাগী সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান। এর আগেও বাইমাইল বাসষ্ট্যান্ডে স্থানীয় আওয়ামীলীগের উদ্যোগে মাসব্যাপী ইফতার মাহফিলের মঞ্চ গত ১৫ রমজান হামলা চালিয়ে তছনছ করে দেয় এই দুষ্কৃতিকারীরা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ হলেও অজ্ঞাত কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। দীর্ঘদিন যাবত এদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও দাবী জানান তারা ।
মামলার বাদী মো. আতোয়ার হোসেন বলেন,তাৎক্ষণিকভাবে সার্কেল এএসপি,ওসি স্যারসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দলীয় অফিস ভাঙ্চুর,জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির ওপর আক্রমণের ঘটনায় গত ৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে আশংকা করছি । এ ছাড়া তার ওপর বিভিন্ন সময় হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও তিনি জানান।
মামলার আসামীরা পলাতক থাকায় কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে ও তা বন্ধ পাওয়া যায়। সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু বলেন,এ সমস্ত মামলা তো পুরনো খেলা । আমার জানা মতে,এটা আওয়ামীলীগের দু’গ্রুপের কোন্দলের কারণে হয়েছে । বিএনপির কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত না। তিনি আরো বলেন, সেলিম তো পূর্বে বায়রা ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি ছিল । বর্তমানে তিনি বিএনপির কেউ না, কোনো কমিটিতে নেই এবং তার সাথে কারো সম্পর্ক নেই । তিনি আওয়ামীলীগের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে থাকে।
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান (ভিপি শহিদ) বলেন,জাতির পিতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কুপিয়ে অফিস তছনছ ও লুটপাটের ঘটনায় এখনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় আমি হতাশ। তিনি দ্রুত আসামি গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার এসআই মো. মাসুদুর রহমান বলেন,আসামি গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে । প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি, আশা করি অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের আমাদের হেফাজতে নিতে পারবো।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার ( সিংগাইর সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, আসামীদের বাড়িতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও পাওয়া যায়নি, গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।