1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

হিজড়াদের জীবন পাল্টাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২২ মে, ২০১৯
  • ১২৬৫ বার দেখা হয়েছে

পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সবখানে তারা কেবল অপমান, উপহাস, তাচ্ছিল্য আর নিগ্রহের শিকার। সম্মানজনক কোনো কাজ করে জীবন কাটানোর মতো সামাজিক বাস্তবতা তাদের জন্য ঠিক নেই বললেই চলে। তবে তা পেলে তারাও যে কাজ করে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে, তার প্রমাণ এখন রাজধানীর শতশত হিজড়া।

সমাজসেবা অধদিফতর এবং সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিথিংকের সহযোগিতায় রাজধানীর শতাধিক হিজড়া এখন স্বাবলম্বী। সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষগুলো বর্তমানে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে সাবলম্বী করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও আদায় করে নিচ্ছেন আলাদা সম্মান।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার হিজড়া রাজিয়া, পলি ও ঝর্ণার সঙ্গে। সমাজসেবা অধদিফতর এবং সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিথিংকের সহযোগিতায় পারলারের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। কথা হলে তারা বলেন, সমাজ হিজড়া সম্প্রদায়কে যেখানে অবহেলা করে, সেখানে রিথিংক আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। এখন কাজ করাটা আমাদের জন্য একটা বড় ব্যাপার। পারলারে কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে সাবলম্বী করার পাশাপাশি পাচ্ছি আলাদা সম্মান। যেটা আমাদের জন্য সাধারণভাবে পাওয়া সম্ভব হয় না।

পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আনিকা ও আনোয়ারুল হিজড়া জানান, হিজড়া বলে যেখানে কেউ সম্মান দেখায় না, সেখানে একটি কাজের জন্য প্রশিক্ষণ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। আমরা রিথিংকের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে প্রশিক্ষণের পর এখন কাজ করাটা যেমন সহজ, ঠিক তেমনি একটি কাজের ব্যবস্থা হলে নারকীয় জীবন বাদ দিয়ে আমরা সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারি।

আর নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে প্রশক্ষিণপ্রাপ্ত ঝুমি হিজড়া বলেন, এই প্রশিক্ষণ পেয়ে আমি অনেক খুশি। কেননা, নিজে কাজ করার গর্বটা একটু অন্যরকম। এর একটা আলাদা সুখ আছে।

শুধু পারলার, পরিচ্ছন্নকর্মী বা নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবেই নয়; সংগীত, নৃত্য ও চিত্রকলার পাশাপাশি সংবাদ উপস্থাপক হিসেবেও হিজড়াদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে বলে জানালেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা রিথিংকের পরিচালক লুলু আল মারজান।

কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, কাজ শেখা কিংবা প্রশিক্ষণ পাওয়াটাই মূল বিষয় নয়, তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ এবং সমাজের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত নাগরিকের তাদের কাজে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ খুব জরুরি। আর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পুরুষ, হিজডা এবং নারী সবার মানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি একটি বিষয়। সাধারণ মানুষের মতো করে সমাজের এই বিচ্ছিন্ন মানুষগুলোকে কাজে লাগানো এবং তাদের দিয়ে নতুন কিছু করানোটাই মূল ব্যাপার। তারা কখনোই অন্য পাঁচটা মানুষের থেকে ভিন্ন নয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যখন নতুন জনবল নেয়, তখন তাদেরও শিখিয়ে নিতে হয়। এদের ক্ষেত্রেও তাই। এরা কাজ শিখে নিজেদের প্রমাণ করছে দারুণভাবে।

তিনি বলেন, সমাজসেবা অধদিফতর এবং রিথিংকের সহযোগিতায় ‘রাজধানীতে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সদাচরণ প্রশিক্ষণ’র মধ্য দিয়ে বর্তমানে হাজারও হিজড়া তাদের পুরানো প্রথা ছেড়ে নিজেরাই কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ ৫৫ জন হিজড়াকে নিরাপত্তা প্রহরী, ৬৫ জনকে পরচ্ছিন্নকর্মী এবং ১৩০ জনকে পারলারের বিভিন্ন কাজের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া স্বাভাবিক-সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য একটা ক্ষমতার রুদ্ধদ্বারে গুরু মাতার কাছে তারা আটকে যায়। আমাদের উদ্যোগ হচ্ছে গুরুদের সিন্ডিকেট এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে তাদের বের করে এনে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা। এখানে যারা আসছেন, তারা প্রতিজ্ঞা করেছেন পুরানো প্রথা ছেড়ে সামনে এগোনোর। আমাদের বিশ্বাস সাংস্কৃতিক কর্মসূচি এবং বিভিন্ন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার মধ্য দিয়ে মূল স্রোতধারায় এনে কিছুটা হলেও তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারবো- যোগ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury