স্টাফ রিপোর্টার:
মানিকগঞ্জে সদর উপজেলায় ডাউটিয়ায় মানব মঙ্গল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ ও শিমুলিয়া সোনার বাংলা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. নামে দুইটি ক্ষুদ্র ঋন প্রদানকারি এনজিওর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রাহক হয়রানিসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে সাটুরিয়া উপজেলার শিমুলিয়ায় নিবন্ধন নিয়ে শুরু হওয়ার পরে ২০১৮ সাল থেকে সদর উপজেলার ডাউটিয়া বাজারে সাইনবোর্ড বিহীন দুই রুমের অফিস থেকে পরিচালিত হয় এনজিও দুটির কার্যক্রম। শিমুলিয়া সোনার বাংলা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি আব্দুস ছালাম ও মানব মঙ্গল মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রাজা হলেও পরিচালিত হয় যৌথ ভাবে। সেখানে ঋণের বিপরিতে ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, সাদা চেক, ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এর মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরন করা হয়।
এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জনের নামে মামলা করে প্রতিষ্ঠান দুটি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় রয়েছে ১৮ জন। ঋণের টাকার পরিমানের বেশী দাবি করে করা হয় এসব মামলা। ঋণ পরিশোধের পরেও মামলা করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
ডাউটিয়া এলাকার জোয়েন খানের ছেলে জামাল উদ্দিন খান বলেন আমি মানবমঙ্গল সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলাম। মামলা দিছে ৬১ হাজার টাকার। অর্ধেক টাকা পরিশোধ করার পরেও ২মাস আগেই ৫৫ হাজার টাকার লাঙ্গল নিয়ে যায় এবং আমি বই চাওয়ায় তারা বলে বই হেড অফিসে রয়েছে । পরে তারা বই ও দেয় নাই সিট ও দেখায় নাই। এখন মাসে মাসে আমার কোর্টে যাইয়া হাজিরা দেওয়া লাগে।
ডাউটিয়া বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী শাহাদত খান বলেন আমি সোনার বাংলা এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকার লোন নিয়ে কয়েকটা কিস্তি দেওয়ার পরে করোনার সময় আমি দোকানে লস খাইয়া গেছি তাই কিস্তি দিতে একটিু দেরি হইছে। পরে কিস্তি আমি চালিয়েই গেছি। কিস্তির ডেট থাকার পরেও একটা নোটিশ পাঠালে আমি ওনার সাথে আপোস করছি। আপোস করার পরে বইতে সে ২০ হাজার টাকা পায়। তো আমি ১০ হাজার টাকা দিছি। তো পরে আমার ভাই মারা গেছে আমার ভাতিজি মারা গেছে এর মধে আমি একটু সমস্যায় ছিলাম বিধায় ওনি আমার নামে ওয়ারেন পাঠাইয়া পুলিশ দিয়া ধইরা নিয়া গেছে। ৫৫ হাজার টাকার মামলা দিয়া। সে আমারে অনেক হয়রানি করছে আমি এর বিচার চাই।
স্থানীয় শুকুর ফেরাজী বলেন আমি এই সোনার বাংলা থেকে ১৫ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে তার কর্মীর কাছে চারটা কিস্তি দেই। তারপর এই সমিতিটা পালিয়ে যায় আমি বই চাই বইও দেয় না। একটা রিসিভ দিছিলো টাকা দিছি সাড়ে সতেরশো আমি পড়া জানিনা চোখেও কম দেখি সেই রিসিভের মধ্যে ওঠাইছে সাতশো টাকা।
শিমুলিয়া সোনার বাংলা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটিডের শাখা ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন রাজা বলেন ঋণ নেওয়ার পর যারা কিস্তি দেয় নাই তাদের নামেই মামলা হইছে। ঋণ নেওয়ার পর যারা ঋণ দিয়া দিছে তাদের নামে মামলা হয়ও নাই বা মামলা করার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। দুইটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এবিষয়ে এনজিও ফেডারেশনের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি মো. ফরিদ খান বলেন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম তারাই করতে পারে যাদের মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির লাইসেন্স আছে। আর সমবায় হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট জায়গার যারা সদস্য থাকবে শুধু তারা চাঁদা তুলে তাদের মধ্যেই বিতরন করবে। কিন্তু এটা এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় করার কোন বিধান নাই। আর যারা সমবায় কার্যক্রম পরিচালনা করে এরা কিন্তু এনজিও না। এনজিও হচ্ছে সমাজসেবা থেকে যারা রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত এনজিও বিষয়ক বুরো থেকে যারা রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত তাদের হচ্ছে এনজিও। তো এরা বিভিন্ন নামে অনামে বিভিন্ন সময় এরকম ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে তো আমিও শুনেছি যে ওনি সোনার বাংলা সমবায় সমিতি আবার মানবকল্যাণ সমবায় সমিতি দুই নামেই ঋণ দিয়ে কয়েক জনকে জেলেও পাঠাইছে মহিলা সদস্য। কোন এনজিও কিন্তু এইভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে না। বড়জোর একটা উকিল নোটিশ দিতে পারে যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন আমি শুনেছি এনআইডির অরজিনাল কপি জমা রেখে তারপরে বসত ভিটার জমির দলিল জমা রেখে তারা ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটা আমাদের জানামতে কোন নীতিতে নাই। তো এবিষয়ে আমরা দেখব এবং পরবর্তীতে জেলা সমবায় অফিস আছে সেখানে গিয়ে আমরা খোজ নিব পাশাপাশি আমাদের এনজিও ফেডারেশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যদি প্রকৃতই সে দোসী হয় তাহলে আমাদের এনজিও ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসককে অনুরোধ জানাব।