স্টাফ রিপোর্টার:
মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে নির্বাচনী মোকদ্দমা দায়ের করেছেন চশমা প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এম বজলুল হক খান (রিপন)। আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রকৃত প্রার্থীকে ঘোষণা করা হবে প্রত্যাশা করছেন তিনি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা হয়ে ক্ষমতা বুঝে পেলে মানিকগঞ্জের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
নির্বাচনী মোকদ্দমা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের ১৭ই অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন আনারস প্রতিকের প্রার্থী মোঃ গোলাম মহিউদ্দিন।
প্রতিপক্ষ চশমা প্রতিকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং আনারস প্রতিকের পরাজয় সুনিশ্চিত জেনে চশমা প্রতিকের প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল প্রয়োগ করেন। নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নগদ টাকা, চাঁদরসহ নানা ধরনের উপঢৌকন এবং প্রকাশ্যে খাবার বিতরণ করেন।
এছাড়াও ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার করে প্রতি উপজেলায় প্রকাশ্য দিবালোকে ভোটারদেরকে একত্রিত জোরপূর্বক ভোট আদায় করেন। তৎবিষয়ে চশমা প্রতিকের প্রার্থী প্রধান নির্বাচন কমিশনারবৃন্দের নিকট তাৎক্ষনিক আবেদন করেন এবং বেসরকারীভাবে ঘোষিত অবৈধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে গোলাম মহিউদ্দিনের নাম বিজয়ী হিসাবে গেজেটভুক্ত না করার অনুরোধ করা হলেও ২০২২ সালের ২৭ই অক্টোবর আানরস প্রতিকের প্রার্থী গোলাম মহিউদ্দিনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করা থাকলেও জেলার হরিরামপুর উপজেলায় ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয় এবং বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হয় বিকেলে পাঁচটায়। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় শিবালয় উপজেলায়। চশমা প্রতিকের বিজয় নিশ্চিত জেনে জেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসার, জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ গোলাম মহিউদ্দিনের বিজয়ের জন্য পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক শিবালয় উপজেলা ভোট কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রেখে জনৈক মহিলা ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ মিল না হওয়া সত্বেও তার ভোট অপকৌশল অবলম্বনে গ্রহণ করা হয় এবং ভোট গননার পূর্বেই প্রিজাইডিং অফিসার তার অধীনস্থদের গোলাম মহিউদ্দিনের পক্ষে ফলাফল গোষণা করার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
অপরদিকে দৌলতপুর উপজেলা ভোট কেন্দ্রে তৎকালীন সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ চশমা প্রতিকের এজেন্টদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জোর পূর্বক ভোট আদায় করে নেন এবং চশমা প্রতিকের চিহিৃত ভোটারদেরকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখেন। নির্বাচনী ফলাফলে চশমা প্রতিকের মোট ভোট ঘোষনা করা হয় ৪২৫ আর আনারস প্রতিকের ভোট দেখানো হয় ৪৫২। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চশমা প্রতিকের ভোট আনারস প্রতিকে দেখিয়ে মহিউদ্দিনকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয় বলেও উল্লেখ রয়েছে নির্বাচনী মোকদ্দমায়।
নির্বাচনী মোকদ্দমা বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চশমা প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এম বজলুল হক খান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করলেও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আনারস প্রতিকের প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগে সভাপতি এ্যাড: গোলাম মহিউদ্দিন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ যোগসাজসে তাকে বিজয়ী বলে ঘোষনা করেন। বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ জেলা পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছে। এই মোকদ্দমার মাধ্যমে অবশ্যই তিনি ন্যায় বিচার পাবেন এবং মানিকগঞ্জবাসীর উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবেন বলে মন্তব্য করেন। এসময় দুই শতাধিক কর্মী সর্মথক উপস্থিত ছিলেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রহমান বলেন, এক এম বজলুল হকের মোকদ্দমাটি বিজ্ঞ আদালতে একতরফায় রয়েছে। বিবাদীপক্ষ আদালতে হাজির হয়নি। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রæতই জেলা পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এক এম বজলুল হক আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়ে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রামের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদলতে নির্বাচনী মোকদ্দমা দায়ের করে ন্যায় বিচার পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন।