মোঃ জাহাঙ্গীর আলম,সাটুরিয়া
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় দিঘলীয়া ইউনিয়নে পৌলশুরা মৌজার প্রায় ৮ একর (৮০০ শতাংশ) সরকারি খাস জমি ভুয়া দলিল ও ভুয়া বন্দোবস্তের মাধ্যমে এলাকার একটি প্রভাশালী মহলের কয়েক ব্যাক্তি দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দৃশ্যমান ভাবে বিশাল জলাশয় হলেও দখলদাররা নিজেদের পরিচয় গোপন করে ভ‚মিহীন দেখিয়ে ওই জমিকে কৃষি এবং নাল জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এমনকি ওই জমি কিছু অংশ বিক্রি করে দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সাটুরিয়া ভূমি অফিস থেকে তদন্তে প্রাথমিক ভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
দিঘলীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যাম মতিয়ার রহমান মতি গত ৪ এপ্রিল ওই জমির অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগ অনুযায়ী দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মানিকগঞ্জ জেলা যখন মহকুমা ছিল তখন মোঃ মজিবর রহমান, আঃ খালেক ও আনোয়ারুল হক ভুমিহীন হিসাবে ওই খাস জমি বন্দোবস্ত নেন। তখন তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৫ বছর। বন্দোবস্ত দলিলে কৃষি জমি দেখালেও রেকর্ডে বিল।
তিনি অভিযোগ করেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা এই জমি বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। নিজেদের ভুমিহীন দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তারা ছিলেন বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বন্দোবস্ত পাওয়ার কিছুদিন পরে ওই জমির কিছু অংশ বিক্রি করে দেয়া হয় আঃ রসিদ ও মোন্তাজ আলীর কাছে। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ওই জমি আবার নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেয়। তখন তাদের বয়স ছিল ৮ বছর। দিঘলীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ওই ভুয়া বন্দোবস্ত ও ভুয়া রেকর্ড বাতিল করে ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের জন্য আবেদন করেন।
এদিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাটুরিয়া সহকারি কশিশনার (ভ‚মি) গত ৩১ জুলাই সরজমিনে তদন্ত করে দিঘলীয়া ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসীলদার) মোঃ আজহার আলীকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। যদিও প্রতিবেদনে দখলদার ও বন্দোবস্ত পাওয়া কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, উল্লেখিত জমি সিএস রেকর্ডে ভুমির শ্রেণী নদী ছিল। এস এ রেকর্ডে জমির শ্রেণী রাস্তা, বিল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আরএস রেকর্ডে ওই জমির শ্রেণী দেখানো হয়েছে বোর,বিল ও নাল হিসাবে। তবে সরজমিনে তদন্ত করার দাবি করে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন বর্তমানে ওই জমি বিশাল জলাশয়ের মত দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে যা বিলের আকার ধারণ করে।
ওই জমির বর্তমান দখলদারদের মধ্যে আইয়ুব আলী নামের একজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তার বাবা মতিউর রহমান সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের লিজ নিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনিসহ মোট ৮জন ওই জমি ভোগ দখল করছেন। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী তারা ওই জমির রের্কড করা মালিক হয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
সাটুরিয়ার দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান মতি বলেন, দখলকারীরা ভ‚য়া কাগজপত্র তৈরী করে সরকারের ৮ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে ভোগ করছে। এমনকি একাধিক ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, দখলদারী যখন পত্তন নেয় তখন তাদের বয়স ছিল ৪ থেকে ৫ বছর। আর যখন রেকর্ড করা হয় তখন তাদের বয়স ৮ বছর বলে জানান তিনি।
সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে কুলসুম সম্পা জানান তিনিও সরজমিনে পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে ফিরতি কোন নির্দেশনা এখনও পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত ভুমি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সারাদেশে কৃষি, অকৃষি খাস জমির পরিমান ৫৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৬৮ একর। এরমধ্যে বিপুল পরিমান খাস জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে অক্টোবরে জাতীয় কৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বেদখল জমি উদ্ধারের নির্দেশ দেওয় হয়।