স্টাফ রিপোর্টার :
সাতদিনের ব্যবধানে জাতীয় শ্রমিকলীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার দুটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছে মানিকগঞ্জ শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিদ্যমান পুর্নগঠিত কমিটি থাকা সত্ত্বেও আরেকটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন।এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নেতাকর্মীরা ।
জাতীয় শ্রমিক লীগের প্যাডে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত মানিকগঞ্জ জেলা কমিটি অনুমোদনের কাগজপত্রে দেখা যায়, ১৫ অক্টোবর বাবুল সরকারকে সভাপতি ও কাজী মতিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় শ্রমিকলীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ জাতীয় সংসদের ন্যাম ভবনে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কার্যালয়ে গিয়ে বাবুল সরকারের হাতে ওই অনুমোদনের কপি তুলে দেন। এসময় সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটি মো. আব্দুল জলিলকে সভাপতি এবং মো. হানিফ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১-সদস্যবিশিষ্ট মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই কমিটি ঘোষণা করেন।
সাতদিনের ব্যবধানে দুটি কমিটি গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ বলেন, ৭ অক্টোবর যে কমিটির অনুমোদন দেয়া হয় তা তার জানা নেই। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বাবুল সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক হানিফ আলীর দ্বন্দ্বের কারণে দুটি কমিটি জমা পড়ে। হানিফ আলীর কমিটিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো সুপারিশ করেন। আর বাবুল সরকারের কমিটিতে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন সুপারিশ করেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বাবুল সরকারের কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়।
ন্যাম ভবনে গিয়ে এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় এমপি ও মমতাজ বেগম এমপি’র উপস্থিতিতে অনুমোদিত কমিটি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তিনি বলেন, তিনি জাতীয় শ্রমিকলীগের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে সেখানে গিয়ে তাদেরকে পেয়েছেন।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ন্যাম ভবনে গিয়ে অনুমোদিত কমিটি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন তিনি সেখানে যাননি এবং সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে তাকে কেউ জানায়নি।
৭ অক্টোবর ঘোষিত জেলা শ্রমিকলীগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ আলী বলেন, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাবুল সরকারকে সভাপতি এবং তাকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের কমিটি অনুমোদন দেন। কিন্তু দীর্ঘ ২২ মাস অনুপস্থিত থাকা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনাসাপেক্ষে জেলা কমিটির সভায় ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫৫ জনের উপস্থিতি ও সাক্ষরে বাবুল সরকারকে বহিস্কার করা হয়। ৭ অক্টোবর আব্দুল জলিলকে সভাপতি করে কমিটি পুর্নগঠন করা হয়।
কিন্তু ৭দিনের মাথায়, বাবুল সরকারকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটির অনুমোদন দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দলীয় কর্মকান্ড। এই অবৈধ কমিটি বাতিলের দাবীতে ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও গণপ্রজাতত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর আবেদন করেছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকলীগকে কলংকমুক্ত এবং আরো গতিশীল করতে ৭ অক্টোবর কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে দুষ্টচক্রের প্রভাবে একটি বৈধ কমিটিকে বাদ রেখে সাতদিনের মাথায় আরেকটি কমিটির অনুমোদন দিয়ে দলের ক্ষতি করা হয়েছে। এব্যাপারে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।