আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)র নির্বাচন। এবারে প্রথমবারের মতো পুরো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এবারে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়েই অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষ কয়েক নেতা প্রার্থী বাছাইয়ে মাঠ জরিপ শুরু করেছেন। দলের জন্য নিবেদিত, নিজ এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ও জনপ্রিয়—এমন নেতা খুঁজছেন তারা।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেনি দলটি। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে। যারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।
এরই মধ্যে রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রত্যাশীদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ যথাক্রমে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরে মেয়র পদে বেশ কয়েজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়াও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামও রয়েছে। তা ছাড়া দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন ব্যবসায়ী তমিজী হক। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক এমপি ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনএবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নাম শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া কাউন্সিলে প্রত্যেকেই নিজেদের অবস্থান থেকে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে বলে ইতোমধ্যে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। যদিও এখন পর্যন্ত দলটি তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। তবে এ দুই সিটিতে একাধিক প্রার্থী কাজ করলেও উত্তরের মেয়র পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে রয়েছেন। আর দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনের সম্ভাবনাই এখন পর্যন্ত বেশি। কিন্তু দলের স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, গত ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে মির্জা আব্বাস প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। আর এবারও উত্তরে প্রার্থী তাবিথ আউয়াল থাকছেন। তবে দক্ষিণের প্রার্থী পরিবর্তন আসতে পারে। ঢাকা দক্ষিণে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন দলের হাইকমান্ডের ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক কমিশনার দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল বাশারের নামও শোনা যাচ্ছে এবং উত্তরে ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাছিদ আঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী হতে আগ্রহী বলেও সূত্রটি জানায়।
গত ২০১৫ সালে ঢাকা সিটি করপোরশন নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রার্থী হতে মনোনয়ন তুলেছিলেন তাবিথ আউয়াল, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ জার্নাল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব—এটা তো আমরা আগেই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই এখন আগে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে বসবো। এরপর পরবর্তী বিষয় নিয়ে বলতে পারবো। এর আগে কিছু বলতে পারব না।
এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপি এই সরকারের অধীনে আর কোনো ভোটে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর উপজেলা নির্বাচন বর্জনও করে দলটি। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির অনেক নেতা উপজেলা নির্বাচন অংশ নেন। আর দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের দল থেকে বহিষ্কারও করে বিএনপি।
পরে গত ৫ জুলাই দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে দলের আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএনপি। ওই বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিএনপি আগামীতে স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। আর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জানুয়ারি।
জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজও শেষ করে আনছে কমিশন সচিবালয় ও ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। তৈরি করা হয়েছে খসড়া ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের খসড়া তালিকায়। খসড়ায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৪৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে।
এই সিটিতে সম্ভাব্য ভোটার রয়েছেন ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও মহিলা ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খসড়া তালিকায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি ও ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৬২২টি।
দক্ষিণ সিটির সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ জন ও মহিলা ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৯ জন। কমিশন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যমান ভোটার তালিকায় এ দুই সিটিতে ভোট হবে। এর ফলে ভোটার তালিকায় হালনাগাদে অন্তর্ভুক্ত নতুন ভোটাররা এ নির্বাচনে প্রার্থী বা ভোটার হতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে। এ হিসেবে ঢাকা উত্তরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে।