1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

ভোগ্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ ‘অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন’

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ১০৮৮ বার দেখা হয়েছে

বিদায় হতে চলেছে আরও একটি বছর। আর মাত্র আট দিন পরই শেষ হবে ২০১৯ সাল। বছরটি জুড়েই বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, কষ্ট দিয়েছে দেশের ভোক্তাকে।
তবে সব পণ্যকে ছাপিয়ে এ বছর ভোগ্যপণ্যের বাজারে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেঁয়াজ। বছরের শেষ তিন মাস পেঁয়াজের ঝাঁজে একেবারে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে সারা দেশের মানুষকে। দেশের ইতিহাসেই কেবল নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও পেঁয়াজের দাম এর আগে কখনও এত বৃদ্ধি পায়নি। এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছিল।

এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় দুধ, লবণ ও মাংসসহ বেশ কয়েকটি পণ্য আলোচনায় উঠে এসেছে। কখনও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে পাস্তুরিত তরল দুধ, কখনও হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে আলোচনায় আনা হয়েছে লবণকে। আবার কখনও ৬০০ টাকা কেজির দর ছাড়িয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে গরুর মাংস। তাছাড়া বিএসটিআই ভেজাল ও মানহীনতার কারণে ৫২ ধরনের পণ্যকে ভেজাল আখ্যায়িত করলে এগুলো নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এমনকি এই ৫২ পণ্যের বিষয় হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।

চলতি বছর ভোগ্যপণ্যের বাজার কেমন গেল এ প্রশ্নের জবাবে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময়ের আলোকে জানান, ভোগ্যপণ্যের বাজারে ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটেছে ২০১৯ সাল। মাঝেমধ্যে চাল, ডাল, চিনি, মাছ, মাংস এবং সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও সারাবছরই স্থিতিশীল ছিল এসব পণ্যের দাম। অন্যদিকে পেঁয়াজসহ কিছু পণ্য সারা দেশের ভোক্তাকে কষ্ট দিয়েছে।

বিশেষ করে বছরের শেষ তিন মাস ভোগ্যপণ্যের বাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পেঁয়াজ। আসলে পেঁয়াজ নিয়ে মানুষের এত কষ্ট হতো না, যদি সরকার সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিত। আশা করব এবারের সঙ্কট থেকে সরকার শিক্ষা নেবে এবং আগামীতে কখনও এ ধরনের সঙ্কট দেখা দিলে যাতে সরকার আগে থেকে পদক্ষেপ নেয়।

ভোগ্যপণ্যের বাজারে পেঁয়াজ আলোচনায় আসে মূলত গত আগস্ট মাস থেকে। কোরবানির ঈদের আগে অর্থাৎ আগস্ট মাসের শুরুতেও দেশের বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের মূল্য ছিল ৩২-৩৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫-২৮ টাকা। কিন্তু ঈদের আগ দিয়ে প্রথম দফায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে দেশিটা হয় ৪৫ টাকা কেজি এবং আমদানিকৃতটা হয় ৩৫ টাকা কেজি। এরপর থেকে পেঁয়াজের দাম কেবল বাড়তেই থাকে।

পেঁয়াজের সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করে মূলত গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার কারণে। ভারতের এ ঘোষণায় এক লাফে প্রায় তিনগুণ বেড়ে পেঁয়াজ সেঞ্চুরি হাঁকায়। অর্থাৎ পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়ায়। এর পরের তিন মাস অক্টোবর, নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বর মাস পেঁয়াজের ঝাঁজে কাঁদতে হয়েছে ভোক্তাকে। নভেম্বরে পেঁয়াজের কেজি ২৮০-৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। পেঁয়াজ নিয়ে এবার মারামারি, হুড়োহুড়ি, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো, এমনকি পেঁয়াজ ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে। তাছাড়া বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজকে বিমানেও উঠতে হয়। তারপরও সামাল দেওয়া যায়নি পেঁয়াজের বাজার। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে নতুন পেঁয়াজ উঠলে দাম কিছুটা কমতে থাকে। তবে এখনও পেঁয়াজ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিতই আছে। কারণ দেশের বাজারে এখনও পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার ওপরেই রয়েছে।

এর আগে মে মাসে রোজার সময় ছোলা, চিনি, খেজুর ও বেগুন, কাঁচামরিচসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। রমজান মাস জুড়েই এসব পণ্য ভোক্তাকে কষ্ট দিয়েছে। গত ১৩ জুন সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ হয়। পর দিন থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হয়। এ কারণে বাজেট পেশের পর দিন থেকেই ১০ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হয়। ফলে তৈরি পোশাকসহ অনেক পণ্যেরই দাম বেড়ে যায়।

তাছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করায় এলপি গ্যাস, গুঁড়ো দুধ, গুঁড়ো মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, টয়লেট টিস্যু, টিউবলাইট ও চশমার ফ্রেমের দাম বেড়ে যায়। একই কারণে দাম বেড়েছে প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালী সামগ্রী, সিআর কয়েল, জিআই ওয়্যার, তারকাটা, স্ক্রু, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসনসহ গৃহস্থালী সামগ্রী, ব্লেড, ট্রান্সফরমার, সানগ্লাস ও রিডিং গ্লাসের।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সয়াবিন, পামঅয়েল, সূর্যমুখী ও সরিষার তেলের ওপর স্থানীয় ও আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সয়াবিন, পামঅয়েল, সূর্যমুখী ও সরিষার তেল শুল্ক অব্যাহতি পেয়ে আসছিল। বাজেটে শুল্ক আরোপ করায় দাম বেড়ে যায় এসব পণ্যেরও।

মে মাসের একেবারে শুরুতে বিএসটিআই ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে গত ৯ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

তারও আগে ফেব্রুয়ারিতে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার ৯৩টিতেই ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পায়। তখন দুধ নিয়ে বেশ হইচই হয়। কিন্তু ১৩ জুলাই দুধ নিয়ে সবচেয়ে আশ্চর্য হওয়ার মতো খবর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তার নেতৃত্বে পাঁচ কোম্পানির প্যাকেটজাত দুধসহ ১০ ধরনের দুধের নমুনায় ফের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার। দুধের ১০টি নমুনার ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মেলে। এ সময় সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল তরল দুধ।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury