স্বাস্থ্য ডেক্স:
কিছু অসুস্থতায় চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হয় না। মাথাব্যথা, বমিভাব, ডায়রিয়া, গলা ব্যথা ও আরো কিছু সাধারণ অসুস্থতায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার খেলে ভালো অনুভব করতে পারবেন। এখানে কোন অসুস্থতায় কোন খাবার খেলে সুস্থতা ফিরে আসে তার একটি তালিকা দেয়া হলো।
হলুদ ও দারুচিনির মতো মসলা দিয়ে তৈরি করা মসুর ডালের স্যুপ খেতে পারেন। এ খাবার দুধ জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বাদাম ও চকলেটের মতো সম্ভাব্য মাথাব্যথার উদ্দীপক থেকে মুক্ত। এছাড়া এ খাবার চাবাতে হয় না- এটা মনে রাখা ভালো যে, যে খাবার বেশি করে চাবাতে হয় তা মাথাব্যথার মাত্রা বাড়াতে পারে, বলেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ডায়েটিশিয়ান এবং ‘স্লিম ডাউন নাও: শেড পাউন্ডস অ্যান্ড ইঞ্চিস উইথ পালসেস- দ্য নিউ সুপারফুড’ বইয়ের লেখক সিন্থিয়া সাস। এ স্যুপে ভালো ডোজে প্রোটিন, প্রদাহরোধী উপাদান ও ম্যাগনেসিয়ামও থাকে, যা মাথাব্যথা কমাতে রক্তনালীকে শিথিল হতে সাহায্য করে।
সাইনাসে প্রদাহ হলে মশলাযুক্ত খাবার খেলে উপকার পেতে পারেন। বিশেষ করে কাঁচা মরিচের ক্যাপসাইসিন সাইনাসের প্রদাহ প্রশমিত করতে পারে, অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা রিপোর্টসে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে।
শাকসবজি, রসুন ও অন্যান্য মসলা দিয়ে তৈরি করা পাতলা ঝোলের স্যুপ এবং সেইসঙ্গে মধু মিশ্রিত গ্রিন টি আপনার গলা ব্যথা কমাতে পারে। উভয় গরম তরলই গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ডা. সাস বলেন, ‘রসুন প্রদাহ কমায় ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শাকসবজির পুষ্টি নিরাময়ে অবদান রাখে ও মধু ব্যথা উপশম করে।’
কলা, ভাপে রান্না করা বাদামী চাল, আপেলসস ও আদার চা বমিভাব দূর করতে বিশেষ কার্যকর, বলেন ডা. সাস। এসব খাবার সহজে নিচে নামে ও পরিপাকতন্ত্রকে শান্ত রাখে। আদার চা তৈরি করতে আপনি গরম পানিতে আদা মেশাতে পারেন অথবা ইয়োগি জিনজার বা টাজো গ্রিন জিনজারের মতো টি ব্যাগও কিনতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, আদার চা পানে বমিভাবাপন্ন কেমোথেরাপি রোগীদের বমিভাব ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
ক্লান্তির জন্য একক কোনো খাবার জাতীয় প্রতিকার নেই। ক্লান্তির সমাধান নির্ভর করে কারণের ওপর। আপনার ক্লান্তির কারণ জানা না থাকলেও প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি, গ্রিল করা তৈলাক্ত মাছ ও সালাদ খেয়ে দেখতে পারেন। এতে প্রাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও ওমেগা ৩ আপনার শরীরে শক্তি যোগাবে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, কারণ পানিশূন্যতাও আপনাকে ক্লান্ত করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে, বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তর্গত সান্টা বারবারার পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য পরামর্শক এমিলি লিটলফিল্ড। ঘুমের অভাবে ক্লান্তি আসলে ক্যাফেইন পরিহার করুন। ডা. সাস বলেন, ‘শক্তি পেতে কফি বা এনার্জি ড্রিংক পানে তেমন উপকার পাওয়া যায় না, বরং এ পানীয় হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ এ পানীয় কিছু সময়ের জন্য শক্তি সরবরাহ করে পরবর্তীতে আরো তীব্র ক্লান্তিতে ভোগাতে পারে। এছাড়া কফি বা এনার্জি ড্রিংক ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তাই আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে অথবা ঘুমচক্র ঠিক রাখতে চাইলে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান না করাই ভালো।’
মাসিকের ব্যথা কমাতে এককাপ গরম আদার চা পান করতে পারেন, যেখানে অল্প মধু ও লেবুর রসও থাকবে। ডা. লিটলফিল্ড বলেন, ‘আদাতে প্রশান্তিদায়ক উপাদান রয়েছে এবং এ মসলাটি শতশত বছর ধরে পেটের ব্যথা নিরাময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ জার্নাল অব অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, আদা মাসিকের ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেনের মতো কার্যকর হতে পারে। এছাড়া পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বা পানি পানও কিছু পেশীর সংকোচন কমিয়ে মাসিকের ব্যথা উপশম করতে পারে।
ওটমিল ও এর সঙ্গে আঁশ সমৃদ্ধ ফল এবং কুসুম গরম লেবু পানি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যে সহায়ক হতে পারে। এ খাবারের লক্ষ্য হচ্ছে মলকে সচল করা। ডা. সাস বলেন, ‘ওটস ও ফলের আঁশ মলকে নরম করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে কুসুম গরম লেবু পানি পরিপাকতন্ত্রের মাংসপেশিকে সংকুচিত হতে উদ্দীপ্ত করে বর্জ্যকে সচল করতে অবদান রাখে।’
ডা. সাস বলেন, ‘ডায়রিয়া হলে স্পোর্টস ড্রিংক অথবা পিডিয়ালাইটের মতো ওরাল ইলেক্ট্রোলাইট সলুশন পান করুন। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ডায়রিয়া অবস্থায় শরীরে তরল ও ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপন করা। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে, যেমন- কলা ও বাদামী চালের ভাত। ডায়রিয়াতে যেমন তেমন খাবার খেলে পরিপাকতান্ত্রিক মাংসপেশীতে অতিরিক্ত উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে পারে অথবা পরিপাকতন্ত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রদাহ হতে পারে।’
দুটি ডিম, গোটা শস্য ও কম চিনির একটি বিস্কুট এবং এককাপ ব্ল্যাক কফি আপনার ব্রেইন ফগ বা মস্তিষ্কের কুয়াশাচ্ছন্নতা দূর করতে পারে। অসংখ্য গবেষণায় পাওয়া গেছে, ক্যাফেইন সতর্কতা ও মনোযোগ উভয় বৃদ্ধি করতে পারে। এখানে নির্দেশিত পরিমাণে ডিম ও বিস্কুট খেলে ফ্যাট, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটে যথার্থ ভারসাম্য আসবে, যা আপনাকে নিম্ন রক্ত শর্করা জনিত ব্রেইন ফগ এড়াতে সাহায্য করবে।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপে ভুগলে ক্যামোমাইল ও পুদিনার সমন্বিত চা পান করতে পারেন। আপনার স্নায়ুতন্ত্র শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ গরম পানীয় পান করতে পারেন। উচ্চ চর্বি বা চিনি রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ সাইকোনিউরোএন্ডোক্রিনোলজি নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, এ জাতীয় খাবার সেসব স্বাস্থ্য সমস্যার মাত্রা বাড়াতে পারে যা মানসিক দুর্দশার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত চর্বি বা চিনির খাবার খেলে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ ও পেটে চর্বি জমতে পারে- উভয়েই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।