1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন

করোনার ঝুঁকি নির্ণয়, নিয়ন্ত্রণ ও লোকেশন জানতে প্রযুক্তির ব্যবহার

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০
  • ৭১০ বার দেখা হয়েছে

প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এমনকি লোকেশন চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণও সম্ভব বলে জানিয়েছেন দেশের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তির মাধ্যমেও আমরা করোনা মোকাবিলা করবো। প্রযুক্তি আমাদের তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা সেই মতে ব্যবস্থা নিতে পারছি।

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এলাকা ও সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ইত্যাদি চিহ্নিত করতে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। এমনকি দেশে এমন একটি ওয়েবসাইট (corona.gov.bd) রয়েছে, যেখানে লগইন করে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জেনে নেওয়া যাবে আপনি কতটা করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন। (উত্তর আসবে মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে)। এছাড়া, আপনি কোন এলাকায় রয়েছেন সেটাও এই সাইটের ডিজিটাল ম্যাপে দেখাবে। ফলে একইসঙ্গে দেশের করোনা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলোও দেখা যাবে।

এছাড়া রয়েছে livecoronatest.com নামের একটি সাইট। এই সাইটে লগইন করে ‘লাইভ করোনা ঝুঁকি টেস্ট’ করা যাবে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। এছাড়া এই সাইট থেকে মেসেঞ্জার ও ভাইবারে অ্যাপে গিয়েও টেস্ট করা সম্ভব। তবে যারা সরাসরি মেসেঞ্জার থেকে ঝুঁকি টেস্ট করাতে চান, তাদের মেসেঞ্জারে গিয়ে livecoronatest লিখলে চলে আসবে টুলটি। তারপর প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জানা যাবে করোনা ঝুঁকির মাত্রা। অন্যদিকে ভাইবার ব্যবহারকারীরা ভাইবার অ্যাপে প্রবেশ করে বাংলায় লিখবেন ‘করোনা ঝুঁকি টেস্ট’। টুলটি চলে আসলে শুরু হয়ে যাবে বাংলায় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। মেসেঞ্জার ও ভাইবার চ্যাটবট দুটোই বাংলায়।

অন্যদিকে হোয়াসটস অ্যাপ ও ভাইবারেও (কোভিড-১৯ ) চ্যাটবট চালু করা হয়েছে। যদিও এই দুই মাধ্যমে প্রিলোডেড নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে। এই দুই মাধ্যমে রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া না গেলেও ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে পারবেন।

এছাড়া আইসিটি বিভাগ করোনাবিষয়ক তথ্যের জন্য ন্যাশনাল ডাটা অ্যানালাইটিকস টাস্কফোর্স গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকাকে করোনাভাইরাসের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভাগ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে একনজরেই বোঝা যাবে দেশের কোথায় কী অবস্থা। এটা দেখে লোকেশনভিত্তিক আইসোলেশন বেড এবং সন্দেহভাজন করোনা রোগীর মধ্যে তুলনা, প্রয়োজনীয় আইসোলেশন বেড, আইসোলেশন সক্ষমতা, সন্দেহভাজন করোনা রোগীর সংখ্যা বের করা সম্ভব।

এসব সাইট, চ্যাটবট স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা মেনে তৈরি করেছে সরকারের আই্সিটি বিভাগ। এ বিষয়ে বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী সাড়ে তিন কোটির মতো। ফলে মেসেঞ্জারে বড় সংখ্যক ব্যবহারকারীকে এই সেবার আওতায় আনা যাবে। এছাড়া দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী সাড়ে তিন কোটি, ভাইবার ব্যবহার করেন দেড় কোটি মানুষ। আমরা উভয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই চ্যাটবট তৈরি করে এ কাজে ব্যবহার করছি। এতে সংশ্লিষ্টদের উপকারও হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি উল্লেখ করেন ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে এসব বাংলায় করা হয়েছে।

এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এনেছে ‘করোনা আইডেন্টিফায়ার’নামের একটি অ্যাপ। করোনাভাইরাস নিয়ে ভীতি দূর করতে, সচেতনতা বাড়াতে এবং আশপাশের মানুষ কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য দেবে অ্যাপটি। অ্যাপটি এপিকে-এর মাধ্যমে (http://coronaidentifier.teletalk.com.bd/) অনেকেই ব্যবহার শুরু করেছেন।

জানা গেছে, অ্যাপটির মাধ্যমে কিছু টেস্ট করারও সুযোগ রয়েছে। করোনা আইডেন্টিফায়ার অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারী বুকের এক্সরে ইমেজ অনলাইনে ও মোবাইলে আপলোড করে মিনিটের মধ্যে করোনা টেস্ট রেজাল্ট পাবেন। ব্যবহারকারী করোনা আক্রান্ত— এমন শনাক্ত হয়ে থাকলে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ফলে টেস্টের ফল জানার জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে না।

কোভিড ফাইন্ডার নামে একটি বিশেষ ধরনের অ্যাপ তৈরি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান এবং একই ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী রাজন হোসেন। যৌথভাবে তৈরি অ্যাপটির ব্যবহারকারী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন কিনা, তা জানাতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন তারা। ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো। রাজন হোসেন দেশে সফটওয়্যার ফার্মে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন।

ওয়াহিদুজ্জামান ও রাজন হোসেনের দাবি, করোনা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ হলো রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কোভিড ফাইন্ডার দিয়ে এই কাজটি সহজেই করা যাবে। অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত টেস্ট করানো যাবে, আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তিদের টেস্টের পরিমাণ কমে যাবে এবং করোনার লক্ষণ দেখার আগেই অ্যাপ ব্যবহারকারী নিজের সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশে অ্যাপটি চালু করতে তারা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।

অন্যদিকে এখনও অনেক দেশ প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ টেস্ট করতে পারছে না। ফলে নিয়ন্ত্রণে আসছে না করোনার বিস্তার। অবশ্য এই সমস্যার সম্ভাব্য একটি সমাধান বের করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ওই গবেষকদলের কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গবেষকদের একটি গবেষণা ১১ মে ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, গ্রাহকরা একটি ক্রাউডসোর্সিং অ্যাপের মাধ্যমে তাদের উপসর্গগুলো প্রকাশ করলে কার কার মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে তার একটি পূর্বাভাস পাওয়া যায়। এই পূর্বাভাসের মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর সমাধান আসতে পারে। গবেষকরা ২৪ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ লাখ মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন ধারণা পেয়েছেন।

এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের নাগরিকদের ট্র্যাক করা হয়েছে। দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার এক নম্বর পূর্বাভাস হচ্ছে স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানো। কেউ স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারালে তিনি করোনায় অসুস্থ হতে যাচ্ছেন বলে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। এছাড়া পেশীতে প্রচণ্ড ব্যথা ও ক্লান্তিভাব আসতে পারে।

কারা করোনায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ৮০ শতাংশ নির্ভুলভাবে পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ ও চারটি উপসর্গ বিবেচনায় নিয়েছেন তারা। এই উপসর্গগুলো হলো— স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানো, কয়েকদিন ধরে চলা কাশি, অবসাদ বা ক্লান্তি এবং ক্ষুধামন্দা।

গবেষণায় দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ যারা পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের শুরুর দিকে স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি ছিল না। অন্তত ১৫ হাজার জনের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা গেছে। জ্বর ও কাশি হলো করোনায় সংক্রমিত হওয়ার যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম নির্ভরযোগ্য উপসর্গ।

করোনাভাইরাসের উপসর্গ সম্পর্কে গবেষক দলের অন্যতম শীর্ষ সদস্য এবং লন্ডন কিংস কলেজের জেনেটিক এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. টিম স্পেক্টর বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হলে যেসব উদ্ভট উপসর্গ দেখা দেয়, সেগুলো অন্য বেশিরভাগ রোগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। এ কারণে করোনা সংক্রান্ত পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয় খুব কম।’

টিম স্পেক্টর আরও বলেন, ‘কোভিড ১৯-এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানো। পর্যবেক্ষক অ্যাপের মাধ্যমে এই তথ্যটি সবার কাছে পৌঁছে দিলে এসব লক্ষণ যাদের মধ্যে আছে, তারা টেস্ট করার আগ পর্যন্ত নিজেদের আলাদা রাখতে পারবেন। এভাবে যত মানুষকে অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারির আওতায় আনা যাবে, তত ভালোভাবে করোনা মোকাবিলা সম্ভব হবে।’

গবেষক দলের আরেক সদস্য ও হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক ড. অ্যান্ড্রু টি চান বলেন, ‘করোনায় আক্রান্তদের একেবারে প্রাথমিক স্তরে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করতে পারে পর্যবেক্ষক অ্যাপ। প্রাথমিক স্তরে থাকা রোগীরা না জেনে করোনাভাইরাস ছড়ায়।’

গবেষকরা বলছেন, তাদের এই অ্যাপে গ্রাহকদের খুব বেশি তথ্য দিতে হয় না। ফলে এটি ব্যবহারে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এজন্য করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক অ্যাপটি ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury