করোনাভাইরাসের কারণে গতানুগতিক না করে বিশেষ বাজেট দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, যার মুখ্য উদ্দেশ্য করোনার প্রভাব মোকাবিলার মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও দুর্ভোগ উপশম করা। এ পরিস্থিতিতে তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৯ জুন) বেলা ১১টায় উত্তরার নিজ বাসা থেকে ‘বাজেট ভাবনা : অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোও থাকতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সংকোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে। আয় সংকোচন রোধ করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ সংকটে মানুষের সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজন— খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ও মুদ্রানীতি সহজ করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ‘সামাজিক নিরাপত্তা জাল’ নামে কিছু কর্মসূচি থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। এছাড় উপরে উল্লেখিত কর্মসূচিটিও দুর্নীতিগ্রস্ত।’
জনসেবা খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দুর্বলতাও করোনাকালে উন্মোচিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে ভোগ, চাহিদা, সরকারি ব্যয়, আমদানি-রফতানির সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে বাধ্য। কর্মহীন মানুষের আয় না থাকায় কেনাকাটা কমে গেছে। সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগও কমে যাবে। করোনার কারণে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ১২ শতাংশ কমেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে এভাবে আয় কমে যাওয়ায় ভোগ-ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে।’
ফখরুল বলেন, ‘দেশে ব্যক্তিখাতের ভোগ-ব্যয় জিডিপির ৭০ শতাংশ। এদিকে, ৬ মাসে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। গণপরিবহন সংকটে কৃষকও পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে পরবর্তী মৌসুমে এরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে। বিভিন্ন খুদে ব্যবসা, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও সেবা খাতসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কার্যক্রম অচল।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে নতুন বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। কারণ করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হবে না। আবার অনেকে মনে করেন, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছরের মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করাই ভালো হবে।’
করোনা সংকটের মধ্যে ১১ জুন অর্থমন্ত্রী একটি গতানুগতিক বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাজেটের আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৮.২ শতাংশ। সংশোধিত হার ৫ শতাংশ নির্ধারণের কথা শোনা যাচ্ছে।যদিও আইএমএফ বলছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি হবে ৩.৮ শতাংশ, বিশ্বব্যাংক বলছে ২-৩ শতাংশ এবং ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স বলছে ১.৬ শতাংশ হবে।’
আসন্ন বাজেটে জিডিপির ছয় শতাংশ ঘাটতির প্রস্তাব করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঘাটতির পরিমাণ হতে পারে এক লাখ ৭২ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছর ছিল তিন লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত হাজার কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে এনবিআর সূত্রে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি, আর বাকি ৫৯ হাজার কোটি অন্যান্য খাত হতে আসবে। এনবিআরের পক্ষে এত বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আহরণ (প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) একেবারেই অসম্ভব। তাই এবারের বাজেট হতে যাচ্ছে কাল্পনিক কাগুজে বাজেট।