চলমান করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় বাজেট সাপোর্ট হিসেবে বাংলাদেশকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তথা ৪২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা (৮৪ টাকা ৯১ পয়সা হারে) নমনীয় ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ‘ইডিসিএফ প্রোগ্রাম লোন ফর কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রোগ্রাম অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রোগ্রামের আওতায় এ ঋণ দেয়া হবে। সম্প্রতি এ বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ইডিসিএফ প্রোগ্রাম লোন ফর কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রোগ্রাম অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনোমি ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফার্ম’ (ইডিসিএফ) বাংলাদেশকে বাজেট সাপোর্ট হিসেবে ৫০ মিলিয়ন ডলার নামনীয় ঋণ সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং ভালো কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্পে ১.০৫ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা) ঋণ সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
গত ২০ জুন বিশ্বব্যাংক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ঋণের ফলে কমপক্ষে ২.৫ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান হবে আর বেসরকারি বিনিয়োগ ২ বিলিয়ন ডলার হবে। পাশাপাশি সরকারের প্রতিবছর ২০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
এর মধ্যে, ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হবে বেসরকারি বিনিয়োগ ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা তৈরি শীর্ষক প্রকল্পে।
এই বহুপাক্ষিক সংস্থার মতে, তাদের ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ থেকে মূলধন নিয়ে দেশের সফটওয়্যার পার্ক আর ইপিজেডে ২ বিলিয়ন ডলার বেসরকারি বিনিয়োগ হবে, যা প্রায় ১.৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।
আর এই কর্মসংস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হবে নারী, যার ৪০ শতাংশ সফটওয়্যার পার্ক এবং ২০ শতাংশ ইপিজেডে হবে বলে ব্যাংকটি মনে করে।
এছাড়া অর্থনীতি ও ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা বিষয়ক প্রকল্পে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১ লাখ তরুণকে আইটির ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি সরকারের ২০০ মিলিয়ন সাশ্রয়সহ অতিরিক্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হবে।
বিশ্বব্যাংক গত ২০ জুন এই দুটি প্রকল্পে ঋণ ছাড়াও বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। যা সরকারকে কোভিড-১৯ এর ক্ষতি থেকে অর্থনীতিকে টেনে তুলতে তার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ৫০ কোটি ডলার (৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত ৮ মে সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাটসুগু আসাকাওয়া উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯-এর প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর সহায়তায় আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করব।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কয়েক ধাপে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে এডিবি। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ছাড়াও সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, সেবা প্রদানের নতুন পদ্ধতি ব্যবহার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নারীর সক্ষমতা অর্জন ছাড়াও পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১০ লাখ ডলার বা সাড়ে ৮ কোটি টাকা কারিগরি অনুদান প্রদান করবে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল এডিবি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ কোটি ডলার বা ৮৫০ কোটি টাকা নমনীয় ঋণ অনুমোদন করে। জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৩০ কোটি টাকা ছাড় করে। এছাড়া কারিগরি শিক্ষার্থীদের মাসিক সহায়তা দেয়ার জন্য ১১ কোটি টাকা ছাড় করে।