দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজাভোগের মধ্যে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেন-দরবার চলছে। সে কারণে এ নিয়ে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতা দৃশ্যমান হচ্ছে না। সেজন্য বিএনপির নেতারাও সরাসরি কিছু বলতে চাইছেন না। তবে জানা গেছে, সরকারের সবুজ সংকেত পেলে চিকিৎসার জন্য যে কোনো সময় বিদেশ যাবেন বিএনপি প্রধান।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ যেতে পারবেন না, এমন শর্তে সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর সেদিন গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠেন খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত সেখানেই আছেন তিনি।
এর মধ্যে বিভিন্ন সময় দলটির নেতারা বিএনপি প্রধানের বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এরপর ১১ জুলাই খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলামও তার বিদেশে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের চাপে তো আর ম্যাডাম মুক্তি পাননি বা দলের আইনি লড়াইয়েও তার মুক্তি হয়নি। তিনি যেভাবে মুক্তি পেয়েছেন সেটা সরকারি আদেশে। বিদেশে যাওয়ার ব্যাপার হলে এটাও মুক্তির প্রক্রিয়ার মত হতে পারে। এজন্য আবেদন বা অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু মুখ্য নয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সুবজ সংকেত মিললে বিশেষ বিমানে করে বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যেতে পারেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বেগম জিয়া তো আদালতের আদেশে বের হননি। বের হয়েছেন সরকারের নির্বাহী আদেশে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার তার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে মুক্তি দিয়েছে। তার বাম হতের মাঝখানের তিনটা আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসের সমস্যাও আছে। কিন্তু এখন তো করোনার কারণে তিনি চিকিৎসা করতে পারছেন না।
‘যেহেতু সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা হয়নি, সেহেতু পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে সরকার হয়তো বিবেচনা করতে পারে’— বলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তবে সেলিমা ইসলাম উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা জানালেও বলেন, লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছে কি-না বা আবেদন করার ইচ্ছে আছে কি-না, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, না না, প্রশ্নই নেই, আবেদন করলেই হবে নাকি? (সরকার) শর্ত দিয়েছে। এখন এগুলো নিয়ে কিছু হচ্ছে না।
তাহলে চেয়ারপারসনের চিকিৎসা কি হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। এটা নির্ভর করছে যারা চিকিৎসা করছেন তারা এবং সরকারের ওপর, তারা কীভাবে এ জিনিসটাকে দেখবেন। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করছি, এখন এ ধরনের কোনো বিষয় নেই। আমরা ওনার জামিন চাইবো।
খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশ যেতে পারেন জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া দুই রকম। একটা আইনি প্রক্রিয়া। সেটা হলো আদালতের সাথে যদি আসামির সম্পর্ক থাকে তাহলে আদালত সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন যে, এই আসামিকে বিদেশে পাঠানো যাবে কি-না। সেটার ক্রাইটেরিয়া আছে। তিনি কি ফেরত আসবেন, অথবা চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি-না? প্রথমত, বোর্ড তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বলেছে কি-না?
‘আপনারা দেখেছেন খালেদা জিয়ার ব্যাপারটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বারবার আলোচনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের কাছে সন্তোষজনক বক্তব্য দিতে পারেননি খালেদার আইনজীবীরা। যার কারণে তারা যতবারই জামিন চেয়েছেন বিদেশ চিকিৎসার জন্য, আদালত একমত হননি। বরং বাংলাদেশে ভালো চিকিৎসার কথা বলেছেন, সেই মোতাবেক তার চিকিৎসা চলছে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, খালেদা জিয়া আদালতের নির্দেশে জেল থেকে বের হননি। তিনি সরকারের নির্দেশ মোতাবেক বের হয়েছেন। এখন তারা যদি বলেন, সুচিকিৎসা প্রয়োজন সেটা সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমি আইনজীবী হিসেবে এর বেশি বলতে পারবো না’— বলেন আইনজীবী কাজল।