স্টাফ রিপোর্টার: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন: ‘এমন অভিযানে দু’একটা ভুল হতেই পারে।’রাজধানীতে গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি রোধে র্যাংগস গ্রুপের তত্ত্বাবধানে বিশেষ বাস সার্ভিস ‘দোলনচাপাঁ’র উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অভিযান নিয়ে নানা বিতর্কের পরও তাকে ব্যর্থ বলতে নারাজ কাদের। একরামের ঘটনা তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমাদের নজরে রয়েছে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অবগত রয়েছেন। এতটুকু বলতে পারি, কেউ যদি দোষী হয়, তদন্ত হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে এরই মধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। নিরীহ কেউ শিকার হল কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে। তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।’ দীর্ঘদিন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা একরামুল হক অন্তঃকোন্দল বা বিভক্ত রাজনীতির শিকার হয়েছেন কি না- প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে অন্তঃকোন্দল কোথা থেকে আসলো? আপনারা এই বলছেন ক্রসফায়ার, আবার বলছেন হত্যা। আসলে কী! তদন্ত শেষে না হলে বলা যাবে না, কি হয়েছে। ‘এতটুকু বলবো, দোষী প্রমাণিত হলে ওই অভিযানে যারা জড়িত ছিল কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে এখন আমি আর কিছু বলবো না। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় রয়েছে তারা এ বিষয়ে কথা বলবে।’সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, তাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি হওয়া উচিত দেশের জন্য। বিরোধী রাজনীতি করলে যে সরকারের সমালোচনা ছাড়া আর কোন কাজ থাকবে না, এমনটা ভাবলে কিভাবে হবে?’‘ইয়াবার মরণ ছোবলে আমাদের তরুণ সমাজ আজ ধ্বংসের মুখে। কিন্তু বিএনপি এ বিষয়ে একটি কথাও বলেনি। বরং সমালোচনা করে মাদক ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি শুধু সরকারের সমালোচনা না করে দেশের ভালো নিয়ে ভাবুন। শুধু বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা রাজনীতি নয়।’ গত ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক। ওই ঘটনার পর বেরিরে আসে, তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এমন কি পুলিশও বলছে, তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। এরই মধ্যে শুক্রবার নিহত একরামুল হকের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে একটি অডিও ক্লিপিংস তুলে দেন। যেখানে স্পষ্টই উঠে আসে বন্দুকযুদ্ধে নয়, একরাম নিহত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তের পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। অডিও রেকর্ডের এক মিনিট ৩ সেকেন্ডের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র লোড করার শব্দ পাওয়া যায়। এরপর একটি গুলি চলে। আর্তনাদ করে উঠেন একরামুল হক। আবারও গুলি চলে। ফোনের অপরপ্রান্তে ও আল্লাহ বলে বিলাপ শুরু করেন একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম। এক অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে একরামুল হক কখনোই মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। তার পরিবারের সদস্য, এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাধারণ মানুষও স্বীকার করেছেন তিনি ছিলেন একজন সৎ মানুষ। শুধু স্থানীয় আওয়ামী লীগই নয়, একরামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিও বলছে একরামুল হক ছিলেন সৎ মানুষ, ভালো মানুষ।