ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জলাধার সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
অনুষ্ঠানে রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ম্যুরাল’ ও বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নব-নির্মিত প্রধান কার্যালয় ‘পর্যটন ভবন’ এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পানি ভবন যে জায়গায়, আসলে এখানে অনেকের হয়ত জন্মই হয়নি। আমরা দেখেছি আজকে যে জায়গাটায় এখন পান্থপথ, এটা কিন্তু একটি খাল। ওটাকে বক্স কালভার্ট করে ফেলা হয়েছে। আর পান্থপথের দুই পাশে পুরো জায়গাটা একটা বিল, বিশাল বিল। আর ঠিক তার পাশে গ্রিন রোড, পানি ভবনের জায়গাটা ছিল।
“সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে উন্নয়নের নামে এই জায়গাটা যে একটা বিশাল বিল এলাকা, এখানে একটা জলাধারও কিন্তু সংরক্ষণও করা হয় নাই। এজন্য আমি সবসময় নির্দেশ দিয়েছি যে যেখানে যে প্রতিষ্ঠানেই করা হোক, প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন রক্ষা হবে, প্রকৃতিকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।”
এ সময় বসুন্ধরা ভবনে আগুন লাগার পর পানি না পাওয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এখানে একটা জলাধারও সংরক্ষণ করা হয়নি। যার ফলাফল দেখি, বসুন্ধরা ভবনে যখন আগুন লাগে। যে ভবনটি তৈরি হয়েছে একেবারে বিলের ওপর, জলাধারের ওপর সেখানে আগুন নেভানোর পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি আনতে হল হোটেল সোনারগাঁও সুইমিং পুল থেকে।’
বক্স কালভার্ট ফমুর্লাকে আত্মঘাতী অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি, যেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে না এবং কিছুদিন পর নানা রকমের জটিলতাও দেখা দেয়।
“রাস্তা তৈরি করতে হলে এখন এলিভেটেড রাস্তা তৈরি করা যায়। নিচে জলযানও চলতে পারে, ওপরে রাস্তাও চলতে পারে? তারপরও এই বক্স কালভার্ট কেন করা হয়েছিল? কাদের পরামর্শে করা হয়েছিল সেগুলি নিয়ে আমি বলতে চাই না? সেগুলি এখন বলতে চাই না। কিন্তু সেই সমস্যাগুলি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি। উদ্ধার করতে কিন্তু কতটুকু হবে সেটা জানি না, সম্ভব না এত বছর পরে। তবু আমরা করে যাচ্ছি।”
দেশের মানুষের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুপেয় পানি সরবরাহ করা আর সেটা বেশিরভাগই নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে এটা সরবরাহ করা। অর্থাৎ সুপেয় পানি, নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন অর্থ্যাৎ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা এগুলি আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’
“আমাদের লক্ষ্য আমাদের দেশের মানুষকে সুপেয় পানি দিতে হবে। কিন্তু আমাদের ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সেচের পানি বা ব্যবহারের পানি যেন ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে আমরা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে পারি সেদিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দেই। এতে জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে, আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হবে এবং আমাদের মৎস্য উৎপাদনও বাড়বে, মানুষের মৎস্যের চাহিদাটাও আমরা পূর্ণ করতে পারবো।