নুসরাত জাহান তনিমা :
পুলিশের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা মানবতার সেবক মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান এনায়েত করিম রাসেল। তার চেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মানবতার সেবক।রাসেল যখন ছাত্র ছিলেন তখন তিনি একদিন এক টাকা ভাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে পুরান ঢাকায় যান। পরিকল্পনা ছিল ফেরার সময়ও এক টাকা ভাড়া দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসবেন। দুপুরের খাবার ক্যাম্পাসেই খাবেন। কিন্তু তিনি যার কাছে পুরান ঢাকায় গিয়েছিলেন তিনি তখন ছিলেন না। অপেক্ষা করতে করতে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছিল। ক্ষুধাও লেগেছিলো। এমন এক সময় তার চোখে পড়ে অন্নছত্র নামের এক সংগঠন। সংগঠনটি দুপুরে ক্ষুধার্ত মানুষদের খাবার দেয়। রাসেল তখন একটু দ্বিধা-সংকোচে সেদিন অন্নছত্রতে দুপুরের খাবার খান।
করোনা ও বন্যায় অনাহারী মানুষ দেখে তার তখন অন্নছত্র ফাউন্ডেশনের কথা মনে হয়। ছিন্নমূল মানুষদের পাশে দাঁড়াতে গঠন করেন ‘সেবাতরী ফাউন্ডেশন’। সেবাতরী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতি রমজানে ১০০ জনের ইফতারের আয়োজন করেন। ঈদের দিনও খাবারের আয়োজন করেন। সেই থেকে চলছে এই ফাউন্ডেশনের কাজ।
রাসেল ‘এক মুঠো খাবার’ নামে প্রোগ্রামে প্রতিদিন একশ’ মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেন এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। অনাহারী মানুষেরা দুপুর হলেই ছুটে আসেন সেবাতরী ফাউন্ডেশনের মেহমানখানায়। একেক দিন দেওয়া হয় একেক ধরনের খাবার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য যারা এখানে আসতে পারেন না তাদের খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অর্থায়নে চলে এসব খাবারের আয়োজন। কেউ কেউ আবার অনুদানও দেন এই ফাউন্ডেশনকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে মানিকগঞ্জ থেকে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে সারাদেশে কাজ করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন রাসেল। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজধানী ঢাকা শহরের ছিন্নমূল মানসিক ভারসাম্যহীনদের, যারা পাগল নামে পরিচিত তাদের ‘আনমনাদের আহার’ প্রোগ্রামে প্রতি রাতে ২০ জনকে খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।
রাসেল শুধু ছিন্নমূল মানুষদের দুপুরের বা রাতের খাবারই পরিবেশন করেননি; করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষদের যখন দাফন দেওয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয় তখন তিনি করোনায় মৃত অথবা বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য এক খণ্ড জমিও দান করেন।
রাসেলের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ পৗরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বেউথা এলাকায়। তিনি মানিকগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সফল সভাপতি প্রয়াত লিয়াকত আলীর ছেলে। তার বাবাও ছিলেন একজন সমাজ হিতৈষী। উত্তরাধিকার সূত্রে রাসেল মানবসেবার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেবাতরী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আজীবন চালিয়ে নিয়ে সমাজের বিত্তশালী সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন এই মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা।
তার এই মানবসেবামূলক কাজে মানিকগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ ও পুলিশের ভাবমুর্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে যার অবস্থান থেকে যদি প্রত্যেকে মানবসেবায় কাজ করে তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়া দ্রুত সম্ভব হবে।