মহামারি করোনার কারণে এবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ২৬ দফা নির্দেশনা মেনে উদযাপন করতে হবে। এরইমধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এ নির্দেশনা জেলাসহ প্রত্যেক উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২২-২৬ অক্টোবর শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এবছর প্রতিমা বিসর্জনে শোভাযাত্রা করা যাবে না। বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া, অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে করতে হবে। প্রতিমা তৈরি করে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপে নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মন্দির বা পূজা মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দর্শনার্থী, ভক্ত ও পুরোহিত- সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত এবং সকল দর্শনার্থীকে কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। পূজা মন্দির-মণ্ডপে নারী ও পুরুষের আলাদা যাতায়াত ব্যবস্থা ও বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের জন্য কার্ড-ব্যান্ডধারী অধিক সংখ্যক নিজস্ব নারী-পুরুষের স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। সন্দেহভাজন এবং নারী দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশীর ব্যবস্থা রাখতে হবে। আতশবাজি ও পটকার ব্যবহার থেকে বিরত ও মন্দির-মন্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে সিসি ক্যামেরা সংযোগের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
ভক্তিমূলক সংগীত ছাড়া অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত ও উচ্চ শব্দের কারণে জনসাধারণের মধ্যে যাতে বিরক্তির উদ্রেক না হয় এজন্য মাইক-পিএ সেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে পূজার অংশ হিসেবে ঢাক-ঢোল কাসা এ ধরণের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে। কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে- এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই জনসমাগমের কারণে সরকারের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি যাতে উপেক্ষিত না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মন্দির-মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় এবং বিসর্জন স্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত দীর্ঘ সময় অবস্থান না করার নিয়ম মেনে চলতে হবে। সন্ধ্যার পর দর্শনার্থী প্রবেশে নিরুৎসাহিত এবং সকল প্রকার আলোকসজ্জা, সাজসজ্জা, মেলায় আয়োজন, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। সম্ভব হলে বাসাবাড়িতে থেকে যাতে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারে সেজন্য ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ ও যদি সম্ভব না হয় তাহলে স্বল্পসংখ্যক ভক্তকে নিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একাধিকবার অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেল দুর্গাপূজা করা হবে সেসব ক্ষেত্রে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণভাবে মেলে পূজা করা যাবে কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপর দিকে পূজার দায়িত্ব পালনরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা এবং সংশ্লিষ্টদের মোবাইল নম্বর মন্দির প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূজাকালীন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মন্দির-মণ্ডপ কেন্দ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করতে হবে। মন্দির-মণ্ডপ কেন্দ্রিক ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচন এবং তাদের মোবাইল নম্বর সংশ্লিষ্ট থানায় সরবরাহ করতে হবে। কোন প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত পূর্বক অনাকাঙ্ক্ষিত ও যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানায় ও কেন্দ্রীয় কমিটির মনিটরিং সেলে জানাতে এবং জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সকল স্তরের শাখা কমিটির আওতাধীন সকল মন্দির-মণ্ডপ কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে হবে এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিষদের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা উলেখ রয়েছে।