বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সেখানে অবস্থিত বলিভিয়ার সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম হার্নান্দো সাইলেস অলিম্পিক স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আজ রাত ২টায় এই মাঠেই আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বলিভিয়ার।
কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার আগে লিওনেল স্কালোনির দলের সামনে বলিভিয়ার চেয়েও লা পাজের উচ্চতা জয়ের চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে ম্যাচটি খেলতে বলিভিয়ায় পৌঁছেছে লিওনেল মেসি, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, মার্কোস আকুনিয়ারা। আর সেখানে নেমেই অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গী করে নিয়েছেন অনেক ফুটবলারই।
আলেহান্দ্রো গোমেজ তো টিম হোটেলে যাওয়ার আগে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। গোমেজের মতো আরও অনেক খেলোয়াড়েরই একই অবস্থা। ২০১৮ সালে ব্রাজিল দল তো ম্যাচের মধ্যেই অক্সিজেন নিতে বাধ্য হয়েছিল। মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এত উঁচুতে হওয়ায় ফুটবলারদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এই ভয়টা ঘিরে ধরেছে দলটির ফুটবলারদের। ম্যাচ খেলাকালীন অবস্থায় এই কষ্টের অভিজ্ঞতা কতটা তীব্রতর হয়, সেটাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের।
২০০৭ সালের মে’তে এইজন্য ফিফা ঘোষণা দিয়েছিল, ২৫০০ মিটারের উঁচুতে অবস্থিত স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা যাবে না। তবে ঘরের মাঠের সুবিধা শতভাগ নেওয়া বলিভিয়ার সমর্থকরা ফিফার এমন সিদ্ধান্তে ফুঁসে ওঠে। এবং আন্দোলনের মুখে লা পাজে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
এরপর থেকে লা পাজ মানে আর্জেন্টিনার জন্য এক দুঃসহ স্মৃতি। যদিও দক্ষিণ আমেরিকার শীর্ষ ১০ দলের হিসাব করলে বলিভিয়ার অবস্থান হবে একদম শেষে আর আর্জেন্টিনার শুরুর দিকে। তবে স্টেডিয়াম যখন লা পাজ, তখন বলিভিয়ার সামনে আর্জেন্টিনার অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
লা পাজে দুই দলের সর্বশেষ তিন সাক্ষাতে কোনো জয়ই নেই আর্জেন্টিনার। ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে এই মাঠে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা খেলতে নেমে ৬-১ গোলের ‘ঐতিহাসিক’ হার বরণ করে। পরের দুটির একটিতে ড্র করলেও ২০১৭ সালের সর্বশেষ ম্যাচেও ২-০ গোলের হার দেখেছে আর্জেন্টিনা। এমনকি ২০০৫ সালের পর এই মাঠে কোনো জয় দেখেনি আর্জেন্টিনা।
ক্ষয়িষ্ণু শক্তির বলিভিয়ার সামনে এবার লা পাজের উচ্চতা জয় করে ইতিহাস বদলানোর সুযোগ আর্জেন্টিনার সামনে। কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার যেমন জয়ের আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে এনেছে অপরদিকে বলিভিয়া ব্রাজিলের কাছে হেরেছে ৫-০ ব্যবধানে। এমন অবস্থায়ও বলিভিয়ার কোচ সিজার ফারিয়াস অবশ্য হুমকি দিয়ে রেখেছেন অতিথি মেসিবাহিনীকে।
বলিভিয়ার কোচের ভাষ্যে, ‘হার্নান্দো সাইলেসে বলিভিয়ার বিপক্ষে খেলা আর অন্য শহরে খেলা আর্জেন্টিনার জন্য এক বিষয় নয়। এমন মাঠ পৃথিবীর কোথাও আর নেই।’ বলিভিয়া কোচের এমন কথার সঙ্গে একমত আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনিরও। তিনি নিজেও জানেন এমন উচ্চতায় খেলার কোনো জাদুমন্ত্র তার জানা নেই। তবে নিজেদের দিক থেকে সতর্ক হয়ে মাঠে নামছেন বলে জানিয়েছেন স্কালোনি।
আর্জেন্টাইন কোচের ভাষ্যে, ‘এই উচ্চতায় দারুণ ফুটবল খেলার কোনো জাদুমন্ত্র আমার জানা নেই। তবে আমরা সতর্ক। এখানে বাতাসের তারতম্য একটা ব্যাপার। বলের মুভমেন্টও আলাদা হয়ে থাকে। ওরা ঘরের মাঠে খেলছে। এখানে এত উচ্চতায় কিভাবে খেলতে হয়, সেটা তারা খুব ভালোই জানে। তারা প্রচুর আক্রমণ করবে। তবে আমরা কেবল ডিফেন্ড করবো, এমনটাও নয়।’
এদিকে এই ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা দলের অন্যতম ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালাকে হারিয়েছে। এদিকে আকুনিয়া আগের ম্যাচে চোট পেয়েছেন। ম্যাচে তাকে নাও দেখা যেতে পারে। যদি তাই হয়, তবে তার জায়গায় এদুয়ার্দো সালভিওর মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
বলিভিয়ার বিপক্ষে লা পাজে আর্জেন্টিনার রেকর্ড ভালো না হলেও শেষ ১০ ম্যাচে ৫টি জয় আছে মেসিদের। তিনটি ড্র এবং দুই হার। হার দুটিই লা পাজে। তাই আজকের ম্যাচে উচ্চতা জয় করে ড্র পেলেও খুশিমনেই ফিরবে আর্জেন্টাইনরা।