স্টাফ রিপোর্টার :
সৌদি আরবে অমানুষিক নির্যাতনে নিহত মানিকগঞ্জের নাজমা বেগমের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বাদ জুম্মা জানাজা শেষে তাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে স্বজনদের কাছে বার বার বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন হতভাগ্য ওই নারী। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি তাকে সেখান থেকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এসেছে তার মরদেহ। সেটাও এক মাস ২৪ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ইসলামনগর গ্রামের নাজমা বেগম (৪০) স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে পড়ে যায় অর্থ সংকটে। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ১০ মাস আগে পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে মো. সিদ্দিকের মাধ্যমে সৌদিতে যান তিনি। হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরি দেয়ার কথা বলে তাকে সেখানে পাঠানো হলেও পরে তাকে কাজ দেয়া হয় বাসাবাড়িতে। সেখানে পাশবিক নির্যাতনসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হতো তাকে। বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে যৌন নির্যাতন করতো। কথা না শুনলে মারপিট করা হতো। তাকে ঠিকমতো খেতেও দিতো না।
নাজমা প্রায়ই তার বোন ও ছেলে মেয়েদের ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। মৃত্যুর দুদিন আগেও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের কাছে আকুতি জানান নাজমা। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তাকে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারেনি। এসেছে তার মরদেহ।
নিহত নাজমার ছেলে রাজিব মিয়া জানায়, ২ সেপ্টেম্বর ভোরে এক সৌদি প্রবাসী নাজমার পরিবারকে ফোন করে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন। সৌদি আরবের আরা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে তার মায়ের মরদেহ রাখা হয়েছে বলে তাদের খবর দেয়া হয়। এরপর তারা আবারও সিদ্দিকের কাছে গিয়ে মরদেহ দেশে আনতে অনুরোধ জানান। কিন্তু মরদেহ আনতেও নানা গড়িমসি করছে সিদ্দিক। নাজমার পরিবার সিদ্দিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছে।
এদিকে সিংগাইর থানা ওসি (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নাজমার নিহত হয়েছে দেশের বাইরে। নাজমার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনও গাফিলতি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বামীহারা নাজমা দুটি সন্তানের সুখের আশায় পাড়ি জমান সৌদি আরব। কিন্তু সুখ তার কপালে নেই। ফিরলো লাশ হয়ে। তাও আবার উপজেলা প্রশাসনে সহায়তায়, ১ মাস ২৪ দিন পর।