হাসান চৌধুরী, শিবালয়:
জনবান্ধব শিবালয় উপজেলা ভূমি অফিসের আঙিনা পরিস্কার, পরিপাটি ও সাজানো গোছানো। পোর্চের ফ্রন্টে সজ্জিত উপজেলা ভূমি অফিস, শিবালয় নেমপ্লেটে। দুইপাশে দৃশ্যমান সিটিজেন চার্টার ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বোর্ড। প্রবেশ করলেই হেল্প ডেস্ক। পাশেই সুন্দর করে লেখা আপনার এসি ল্যান্ড এই দিকে। অন্যদিকে সেবাপ্রত্যাশীর বসার কক্ষ ও মিনি লাইব্রেরি। হেল্প ডেস্কের উপরেই সুসজ্জিত করে টানানো রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-২১ এর নাগরিক দায়িত্ব এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত ব্যক্তির কর্তব্য। (এসিল্যান্ড) এর কক্ষে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বেশ পরিপাটি ও সাজানো গুছানো এবং বৃক্ষময় একটি কক্ষ। চেয়ারে বসে আছেন এসিল্যান্ড, সামনের চেয়ারে সেবা প্রত্যাশীরা। আর একপাশে দৃশ্যমান আপনার এসিল্যান্ড।
এটি হলো শিবালয় উপজেলা ভূমি অফিসের বর্তমান চিত্র। অফিসের সব কয়টি কক্ষের নামকরণ করা আছে। কাউকে কোথাও খুঁজতে হয় না। যে কেউ এসে সহজেই যাকে দরকার তাকে খুঁজে পান। অফিসের পুরো বারান্দা সুন্দর ফুলের টব দিয়ে সাজানো। সেবা প্রত্যাশীদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয় এজন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছবি, পদবী এবং মুঠোফোন নাম্বারসহ পরিচিতি বোর্ড দৃশ্যমান রয়েছে। সেবা প্রত্যাশী প্রয়োজনে যেকোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সেবা প্রত্যাশীরা কি কি সেবা পাবেন, প্রত্যাশিত সেবা পেতে সরকারি ফি কত এবং কত সময় প্রয়োজন সবকিছু উল্লেখ করে অফিসের সামনেই দৃশ্যমান সিটিজেন চার্টার (নাগরিক সনদ)। অফিসের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই দেখা যায় সেবা প্রত্যাশীরা কেউ এটি দেখছে আবার কেউ পড়ছে। রেকর্ড রুম করা হয়েছে সুবিন্যাস্ত। প্রতিটি নথি বছর ভিত্তিক সারি সারি করে সাজানো। সেই আগের দৃশ্য এখন আর নেই। কোন নথি কোন সালের এবং কত নম্বরের সেটি খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
অফিসের সবচেয়ে বড় চমক একটি সুসজ্জিত গণশুনানী কক্ষ ও মিনি লাইব্রেরি। এই কক্ষে সেবা প্রত্যাশীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেবা প্রত্যাশীদের জন্য একটি মিনি লাইব্রেরিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, ভূমি বিষয়ক এবং সমসাময়িক বিষয়ের উপর বেশ কিছু বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। সেবা প্রত্যাশীরা এখানে বসে বই পড়তে পারেন। এসিল্যান্ড প্রতি সোমবার ও বুধবার এই কক্ষে সকাল ১০টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত গণশুনানী নেন। শুনানিতে তিনি ভূমি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ, মিস কেস এবং রিভিউ মামলা নিয়ে শুনানি নেন। সেবা প্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এই কক্ষের ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট এবং গণশুনানী নিয়ে ইতোমধ্যেই শিবালয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন হয় ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে। সকলের আইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য চালু করা হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা। অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো অফিস সিসি ক্যামেরার আওতায়।
গত ১ জুলাই ২০১৯ ০থেকে চালু হয়েছে শতভাগ ই মিউটেশন। সেবা প্রত্যাশী ঘরে বসে, ইউডিসি কিংবা অফিসের সাপোর্ট রুমে এসে অনলাইনে নামজারির আবেদন দাখিল করতে পারেন । ২৮ কার্য দিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি হচ্ছে মিউটেশন। ফি নির্ধারিত ১১৭০ টাকা কোর্ট ফিসহ। নামজারির বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রত্যাশীর মুঠোফোনে চলে যাচ্ছে। শুনানির এসএমএস চলে যাচ্ছে মুঠোফোনে। নামজারি মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর সেটি মুঠোফোনের এসএমএসের মাধ্যমেই পেয়ে যাচ্ছে। অফিসে দালালের কোন প্রকার আনাগোনা নেই। ইতোমধ্যেই ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত ঘোষণা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেন। সেবা প্রত্যাশীর যেকোনো সমস্যায় সরাসরি সহকারী কমিশনার (ভূমি) র সাথে কথা বলে সমাধান পাওয়া যাচ্ছে। এতে সেবা প্রত্যাশীর মাঝে আস্থা তৈরি হয়েছে। সেবা প্রত্যাশীরা এখন নিজেই সরাসরি এসি (ল্যান্ড) এর কাছে নিজের সমস্যার কথা বলতে আসেন। শিবালয়ের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে উপজেলা ভূমি অফিস নিয়ে পজিটিভ কথা শুনা যায়। একজন সেবাপ্রত্যাশী জানান, কত পরিবর্তন! আগে আসলে বসতে পারতাম না। কথা বলতে পারতাম না। এখন বসতে পারি, কথা বলতে পারি। এমনকি পড়াশুনাও করতে পারি। আরেকজন জানান, এখন তো অফিসের সামনেই সব লেখা আছে বড় বড় করে। আমার নামজারি করতে কতদিন লাগবে আর কয় টাকা লাগবে সেটা চার্টে লাগানোই আছে।
এ ব্যাপারে এসিল্যান্ড এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড ও জেলা প্রশাসক স্যারের নিদর্শনা এবং ইউএনও মহোদয়ের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা চেষ্টা করছি উপজেলা ভূমি অফিসকে একটি পরিচ্ছন্ন, হয়রানি ও দালাল মুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব অফিস সৃজনে। সেবা প্রত্যাশী যাতে অফিসে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারেন এবং সেবা পেতে যাতে কোন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করেছি অফিস নতুন করে সাজাতে। অনুপ্রেরণার মাধ্যমে চেষ্টা করছি অফিসে কর্মরত সবার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের। সেবা প্রত্যাশীরা যাতে কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সর্বদা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্ক্ষিত সেবাটুকু প্রদান করতে। অফিসে যাতে কোন প্রকার ঘুষ লেনদেন না সেজন্য সবাইকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছি এবং নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে মোটিভেশন দেয়ার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি রক্ষা এবং তদারকির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সেবার মান এবং অফিসের সেবা মূল্যায়ন করবেন সেবা প্রত্যাশীরা। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
নতুন দিনের নতুন অঙ্গীকার। অফিস ঘুরে এবং সেবার মান দেখে আসলেই ভালো লাগল। পরিবর্তন দৃশ্যমান। আলো আসবেই।