রফিক খান :
করোনা ভাইরাসের এ মহাদূর্যোগেও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে গ্রামীণ অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের ২,৩,৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ হতদরিদ্রের সম্পূর্ণ চাল স্থানীয় ১০ টাকা চালের ডিলার গোলাম মর্তুজা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ
ভুক্তভোগীদের।অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৬ সালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা মূল্যে ৩০ কেজি চালের সুবিধাভোগীদের কার্ডের ((রেশম কার্ড) তালিকা করা হলেও ৪ বছর ধরে চাল পাচ্ছেন না তারা। এমনকি তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগী কার্ড করা হলেও দেওয়া হয়নি তাদের হাতে।ডিলার গোলাম মর্তুজা সুবিধাভোগীদের কার্ড নিজের কব্জায় রেখে নিজেই কার্ডে ভুয়া টিপসই বসিয়ে চাল বিতরণ দেখিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চাল আত্মসাত করে আসছে।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের ২,৩,৪ ও ৫নং ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় ৪ নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাচেন মিয়ার স্ত্রী ছালেহার সাথে। তার বয়স প্রায় ৭০ বছরের উর্দ্ধে। তার কোন সন্তানও নেই।দু বেলা আহার জোটে তার ভিক্ষা করে।এ দূর্যোগে কোন ত্রাণ মেলে নি তার। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণে সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের তালিকায় তিনিও একজন সদস্য।তার সুবিধাভোগী কার্ডের ক্রমিক নং ২৫৬ আইডি নং ৫৬১২৮২১৭৮০৯৬৬। তিনি বলেন ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণের তালিকায় আমার নাম আছে। কিন্তু আমাকে কোন সুবিধাভোগী কার্ড দেওয়া হয়নি। ৪ বছর হয়ে গেলেও আমি কোন চাল পায়নি । তিনি বলেন আমি ভিক্ষা করে চলি। করোনা ভাইরাসের কারনে আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এখন ভিক্ষা করতে পারিনা। ভিক্ষা দেয়না। ১০ টাকা কেজি চাল পেলে আমার উপকার হইতো। তাও দেয় না। আমার চাল ডিলার আত্মসাত করে খাচ্ছে।
এছাড়া চাল পায়নি ৪ নং ওয়ার্ডের ক্রমিক নং ২৬০, আইডি নং ৫৬১২৮২১৭৪০৯৬৬ কার্ডের সুবিধাভোগী ছলিম মিয়ার স্ত্রী জাহানারা, ক্রমিক নং ২৫৮ আইডি নং ৫৬১২৮২১৭৪০৯২৯ কার্ডের সদস্য সুকুরজান। তাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন আমাদের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ১০ টাকা কেজির চাল পায়নি। তাদের ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগী কার্ড হয়েছে তাও অনেকে জানে বলে জানায় তারা।
বলড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জানায় আমার ওয়ার্ডে ৬২ টি সুবিধাভোগীর কার্ড আছে তাদের মধ্যে মাত্র ৮/৯ জন চাল পায়। বাকি সদস্যদের চাল দেয় না। ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মালেক বলেন, ৮২ জন মধ্যে ১৪ জন সুবিধাভোগী চাল পায় বলেন জানায় তিনি। ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ আলী ও ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার আক্কাছ জানায় সুবিধাভোগীদের চাল দেয় না দেখে আমরা ডিলারের সাথে কথা বলেছি। আমরা উপজেলায়ও জানিয়েছি বলে তারা জানায়।
বলড়া ইউনিয়নের ১,২,৩,৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের চালের ডিলার গোলাম মর্তুজা চাল আত্মসাতের বিষয়টি অস্বিকার করেন। তিনি বলেন হয়তো ৪/৫ জন ভুলে চাল নাও পেতে পারেন। কিন্তু কার্ডধারী সকলকে চাল দেওয়া হয় বলে তিনি জানায়।অত:পর তিনি মোবাইলে (০১৭৫৫৯৪৮৭৮৫) এই নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে ঘুষ দেওয়ার জন্য বিকাশ নাম্বার চান।
বলড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম (তারেক) জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা দরে ৩০কেজি চাল দেওয়ার কথা কার্ডধারী হতদরিদ্রদের । তাদের চাল দেয় না বলে ভুক্তভোগীরা আমাদের জানিয়েছে। এ পরিপেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেন কার্ডধারী সদস্যরা যেন ঠিকমত চাল গুলো পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, আমরা বিষয়টি শুনেছি। যাচাই করে দোষি প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।