স্টাফ রিপোর্টার :
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সরকারি কাজে বাধা ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে দৌলতপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মো: ফয়জুল ইসলাম উরফে নাজমুলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫/৬ জনকে আসামী করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেছে ধামশ্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ রাজা মোল্লা।
মুহাম্মদ রাজা মোল্লা জানান, বিবাদীগণ মাঝে মধ্যে অত্র ধামশ্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসিত এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাকে বিরক্ত করিত এবং আমাকে দিয়ে বিবাদীদের ব্যক্তিগত জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অবৈধ কাজ করিতে বলিত। আমি বিবাদীদের কথায় রাজি না হওয়ায় আমার প্রতি তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ৮/৯/২০২০ ইং তারিখে বেলা অনুমান ৪.০ ঘটিকার সময় আমি অফিসে রির্টান-৩ এর কাজ করিতে ছিলাম। একই তারিখ বেলা বেলা ৪.১৫ ঘটিকার সময় বিবাদী ১। মো: ফয়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুল (৩৪), পিতা মো: মফিজুল ইসলাম, ২। মো: মফিজুল ইসলাম(৬০), পিতা মৃত আ: গফুর, উভয় সাং নিরালী, ৩। মো: সাহেব আলী(৪৫), পিতা মৃত আরশেদ আলী, সাং- কাকনা, সর্ব থানা দৌলতপুর, জেলা: মানিকগঞ্জগণসহ অজ্ঞাত নামা ৫/৬ জন বিবাদী পূর্বপরিকল্পিতভাবে অত্র ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রবেশ করিয়া নিরালী মৌজাস্থিত নিরালী মাঠ নামে যাহার আর,এস ৫০ নং দাগের ১৪ শতাংশ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করিবে মর্মে আমাকে বলে। আমি রেকর্ড পত্র পর্যালোচনা করিয়া দেখিত পাইযে, উক্ত ভূমির শ্রেণীর কলামে মাঠ উল্লেখ থাকায় আমি ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহন করিতে অস্বীকার করি। অস্বীকার করায় বিবাদী মো: ফয়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুল আমাকে অকথ্যভাষায় গালি দেয়। বিবাদী মফিজুল অফিসের টেবিলে থাপ্পর মারিয়ে বলে যে, বেটা খাজনা না নিলে তোকে এখান হইতে যাইতে দিমু না। এক পর্যায়ে সকল বিবাদী আমার চারপাশে ঘিরে ধরে। অফিসের মধ্যে হট্টগোল দেখিয়া আমার অফিস সহায়ক মো: আব্দুল মালেক দৌড়াইয়া অফিসে ঢুকে পাশে আসিয়া দাড়ায়। বিবাদী ফয়জুল ওরফে নাজমুল বলে যে, নয় খাজনা নিবি তা না হলে আমাদেরকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিবি। টাকা না দিলে তোকে ও তোর অফিস সহায়ককে খুন করিয়া ফেলবো। আমাদের ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন আগাইয়া আসিলে বিবাদী নাজমুল টেবিলে থানা গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র থাবা মারিয়া নিয়া টুকরা টুকরা করিয়া ছিরিয়া ফেলিয়া চলিয়া যায়। চলিয়া যাওয়ার সময় এই বলিয়া হুমকী প্রদান করে যে, আজকের মতো বেচে গেলি পরবর্তিতে আমাদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা না নিয়ে আসিলে তোকে খুন করিয়া লাশ ঘুম করিয়া ফেলিব।
গত ৯/৯/২০২০ ইং তারিখে উক্ত মামলার তিন নম্বর আসামী মো: সাহেব আলী ধামশ্বর ইউনিয় ভূমি উপ সহকারী মুহাম্মদ রাজা মোল্লার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনস্থ ভূমিহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার কথা বলে ১০ জনের জন্য প্রত্যেকে ত্রিশ হাজার করে মোট তিন লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করে মানিকগঞ্জ বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৯ নং আদালতে মামলা দায়ের করে মো: সাহেব আলী। উক্ত মামলার ১নং আসামী মো: ফয়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুল আইনজীবী হিসেবে মামলা দাখিল করেন এবং মামলার ৪ নং স্বাক্ষীও তিনি।
সরজমিনে খোজখবর নিয়ে গিয়ে জানা গেছে, মো: ফয়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুলের বোনের জামাই ২০১৮ সালে ঐ ধামশ্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে। নাজমুলের বাবা মো: মফিজুল ইসলামও ঐ ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকুরী করতো। সেসময়ে নাজমুল তার বাবার সহয়তায় নামজারী মাঠের জায়গা কর্তৃপক্ষের কোন রকম আদেশপত্র ছাড়া অবৈধ উপায়ে হামিদুর রহমান ৬ শতাংশ, মফিজুল ৫ শতাংশ, জহিরুল ইসলামের নামে ২ শতাংশ জমি নাল লিখে নেন। গত ১৩/০৯/২০২০ ইং তারিখে ঐ নামজারি বাতিল করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
এ বিষয়ে বাদী সাহেব আলী করা মামলার তিন নং স্বাক্ষী মো: হারু মিয়া বলেন, সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য তিনি মো: সাহেব আলীর হাতে ৮/৯ মাস আগে একবার পাঁচ হাজার এবং পরে পচিশ হাজার টাকা দিয়েছেন। সাহেব আলী টাকাগুলো নিয়ে নায়েব মোহাম্মদ রাজা মোল্লাকে দেওয়ার কথা বলে অফিসের ভিতরে গিয়াছে।
এ বিষয়ে মামলার ১নং স্বাক্ষী মো: রফিকুল ইসলাম (এলাহী) বলেন, কয়েক মাস আগে নিরালী বাজারের তার ফলের দোকানে বসে যারা ঘর নেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছে তাদের সকলের উপস্থিতি সাহেব আলী তার হাতে তিন লক্ষ টাকা দেয়। তিনি টাকাগুলো গুনে নায়েব মুহাম্মদ রাজা মোল্লার হাতে দেয়। তিনি টাকা নিয়ে অফিসে চলে যায়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মো: সাহেব আলীর ফোন কল দিয়ে যে দশজন টাকা দিয়েছে তাদের নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি মামলার আইনজীবীর সাথে কথা বলে পরে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন। এরপর কয়েকবার তাকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মামলার বাদী মোহাম্মদ রাজা মোল্লা আরো জানান, মো: ফয়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুল দৌলতপুরে গালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দির্ঘদীনের খেলার মাঠ অবৈধভাবে দখল করার জন্য ওঠেপরে লেগেছে। তাদের এ অন্যায় কাজে সহায়তা না করায় আমার নামে তার মার্কেটের ভাড়াটিয়া দোকান মালিক ও পরিবারের লোকজনদের স্বাক্ষী করে কোর্টে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।আর মমলার বাদী মো: সাহেব আলী নাজমুলের বোনের জামাই যখন এই ধামশ্বর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নায়েব ছিল তখন তাকে মোটরসাইকেল করে নেওয়া আনা করতো।