বাংলাদেশে অবস্থানরত ১১ লাখ রোহিঙ্গার একজনও গত তিন বছরে রাখাইনে ফেরত যেতে রাজি হয়নি নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমার সরকারের অনীহার কারণে আস্থা রাখতে পারছে না রোহিঙ্গারা। সেজন্য দুইবার প্রত্যাবাসনের জন্য প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও সফল হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে রাখাইনে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করে রোহিঙ্গাদের আস্থার জায়গা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ সুফিয়ুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে কোনও ধরনের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এজন্য দুবার প্রত্যাবাসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও কেউ যেতে রাজি হয়নি।
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের অনীহার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ছয় লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছিলাম যাচাই-বাছাই করা জন্য এবং এরমধ্যে তারা মাত্র ১০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য আমাদের দিয়েছে।’ গত দেড় বছর ধরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা মিয়ানমারের অনীহার কারণে হচ্ছে না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সমস্যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে না বরং মিয়ানমারের সঙ্গে তার অধিবাসীদের সমস্যা।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মানবতার জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল বাংলাদেশ, কিন্তু এখন এজন্য বাংলাদেশকে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
রাখাইনে এখনও মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের অপারেশন অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন হবে কিনা এটি নির্ভর করছে মিয়ানমারের মনোভাবের ওপর।
কোভিড-১৯ এর অজুহাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে বৈঠক করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের সরকারের ওপর আস্থাশীল না।’ দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এই সমস্যার পূর্ণ সমাধান হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এজন্য রাখাইনে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করা একটি উত্তম ব্যবস্থা।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না এবং সেখানকার অস্থির পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এই কারণে রোহিঙ্গারা ফেরত যেতে চাইছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হলে রাখাইনে একটি অঞ্চল তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা নিরাপদ বোধ করবে।
তিনি বলেন, ‘আসিয়ান এই অঞ্চলের দায়িত্ব নিতে পারে অথবা আন্তর্জাতিকভাবে এর ব্যবস্থাপনা হতে পারে, তবে কোনও অবস্থাতেই ইন্টারনারি ডিসপ্লেস পার্সন ক্যাম্পের মতো পরিবেশ তৈরি করা যাবে না।
রাষ্ট্রদূত সুফিয়ুর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু হওয়ার পরে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, অসংখ্য নারী নির্যাতিত হয়েছে এবং এক লাখেরও বেশি ঘর ধ্বংস করা হয়েছে।