শুভংকর পোদ্দার, স্টাফ রিপোর্টার:
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য। তাদের কারণে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের ভিজিটের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলেও তা মানছেন না তারা।
গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী ও আইএমসিআই বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ সারি। ডাক্তার দেখিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে কেউ বের হলেই তাকে ঘিরে ধরছেন ৭/৮ জন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। হাত থেকে ছোঁ মেরে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তুলছেন ছবি। কার আগে কে ছবি তুলবেন, কে বেশি ছবি তুলবেন-এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এছাড়াও, বর্হিবিভাগের গেটের সামনে একই চিত্র। সেখানে ছবি তোলার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন আরও ৭ জন।
দানিস্তপুর গ্রামের নাজমা আক্তার জানান, তার সন্তানকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন তিনি। ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরেই বর্হিবিভাগের গেটের সামনে থেকে সাত-আট জন তাকে ঘিরে ধরেন এবং হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলেন। বিষয়টি পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক হলেও নারীদের জন্য খুবই বিব্রতকর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসা নিতে আসা আরও তিনজন জানান, ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরেই ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা তাদের ঘিরে ধরেন এবং তাদের হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ছবি তুলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আইএমসিআই বিভাগে রোগী দেখছিলেন ডা. সোহেল রানা। তার সামনে চেয়ারে বসে আছেন ঔষধ কোম্পানীর দুই প্রতিনিধি। তারা ডাক্তারকে তাদের কোম্পানীর ঔষধ লিখতে সুপারিশ করছেন। সাংবাদিক দেখেই সটকে পড়েন তারা। তাদের কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
ডা. সোহেল রানা বলেন, এরা সবসময় থাকে না। মাঝে মাঝে আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তাকে বলে এদের আসা বন্ধ করতে হবে।
ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর প্রতিনিধির সাথে কথা বললে, তিনি তার নাম বলতে রাজি হননি। তিনি জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০টি ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে আমাকে পাঠাতে হবে। আমি ঠিকমতো কাজ করছি কিনা তার জন্যই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে পাঠাতে হয়।
জানতে চাইলে স্কয়ার কোম্পানীর এক প্রতিনিধি বলেন, একটা কমিউনিটিতে কোন রোগ বেশী হচ্ছে তা জানতে সারাদেশে আমাদের প্রতিনিধিরা কাজ করে। এর জন্যই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে হয়। সরকার এই তথ্য আমাদের কাছ থেকে নেয়। সরকারের কোন লোক তো এই সার্ভে করে না। এই সার্ভে অনুযায়ী ঔষধ তৈরি করা হয়। রোগীকে বিরক্ত করার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতাল থেকে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দুপুর একটার পরে ভিজিটের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তারা তা মানেন না। এ বিষয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে সেই নোটিশ আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান বলেন, রোগী থাকা অবস্থায় ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ডাক্তারের রুমে ঢুকতে পারবেন না এবং তারা প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে পারবেন না। লোকবলের অভাব থাকায় সবসময় নজর রাখা সম্ভব হয় না। দেখা যায়, আমি অফিসের বাইরে গেলেই তারা হয়তো আসে। তবে আমি যোগদানের পর তাদের দৌরাত্ম্য আগের থেকে কমেছে।