স্টাফ রিপোর্টার:
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার হেলাচিয়া গ্রামে এক ব্যবসায়ীকে ধারালো ছুরি, লোহার রড ও কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্নক জখম করেছে এক যুবলীগ নেতা এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে।
আহত ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বলেন, হেলাচিয়া বাজারে তাঁর একটি ভ্যারাইটিস স্টোর দোকান রয়েছে। ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোকান বন্ধ করে তিনি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তিনি যখন জনৈক হায়াতের বাড়ি সামনে যান তখন ধারালো ছুরি, লোহার রড, কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্নক জখম করে হেলাচিয়া গ্রামের যুবলীগ নেতা আলি হোসেন (৩৫) এবং তার সহযোগি- সুমন (২২), আসাদ (২২), সুজন রাজবংশী (২৩), রুবেল (২৪), আসাদুর (১৯)ও সোহেল (২২)।এতে তাঁর নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতে নীলা-ফুলা জখম হয়। শুধু তাই নয়, মারাত্নক জখম অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামীরা তাঁর পকেট থেকে নগদ ৩০, ২০০ টাকা এবং ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্যামসাং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তার আর্তচিৎকারে এলাকার লোকজন তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ৬, তারিখ ১৩/১০/২০।
আহত সোহেল হোসেন আরও বলেন, আলি মন্ডল নালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় এক প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রীকে জিম্মি করে ওই নারীর অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষন মামলায় আটক হয়ে কিছুদিন জেলখানায় আটক ছিলো। বর্তমানে ওই মামলায় জামিনে রয়েছে। ওই ঘটনায় যুবলীগ থেকে তাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে প্রমোশন দিয়ে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা যুবলীগে বড় পদ দেওয়া হয়েছে। এরপর তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আরো বেড়ে গছে। সে গ্রামের মানুষকে পুলিশের ভয় দেখায়।
মামলা বাদী পারভীন আক্তার বলেন, আমরা নিরিহ মানুষ। কারও সাথে কোন ঝগড়াঝাটি নেই। আলি মন্ডল এবং তার লোকজন আমদের মারধর করছে। টাকা-পয়সা লুট করছে। মামলা তুলে নিতেও হুমকী দিচ্ছে। পুলিশও তাদের কথাই শোনে। সারাদিন মারামারি-কাটাকটি করে। কত মানুষের সর্বনা করছে। কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। এলাকার সব মানুষ তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও হামলাকারীদে কাউকে গ্রেফতার না করায় তারা উদ্বিগ্ন।
এদিকে, হেলাচিয়া গ্রামের এক দম্পত্তিকে বাড়িতে গিয়ে মারধর এবং টাকা লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে ওই যুবলীগ নেতা এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আদালতে মামলা করায় অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকীও দিচ্ছে আসামীরা। হুমকীর ঘটনায় ঘিওর থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
ওই যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগিরা ৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ছালাম মন্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়।ছালাম মন্ডল ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া বেগমকে মারপিট করে মারাত্নক জখম করে। এরপর অভিযুক্তরা ছালাম মন্ডলের ঘর ওথকে এক রাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে এবং মামলা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে তার চলে যায়। এই ঘটনায় ছালাম মন্ডলের স্ত্রী রিজিয়া বেগম মানিকগঞ্জ আদালতে সি আর মামলা (মামলা নং-১৪১/ঘিওর/২০২০) দায়ের করেন। আদালতে মামলা করার কথা জানতে পেরে আলি মন্ডল এবং তার সহযোগিরা ১৩ অক্টোবর সকাল ১০টায় ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে এবং মামলা তুলে নিতে বলে। মামলা তুলে না নিলে প্রাণে মেরার হুমকীও দেয়।
এই ঘটনায় রিজিয়া বেগম ঘিওর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ বলে একই লোকের বিরুদ্ধে এত মামলা দেওয়া যাবে না।
ঘিওর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ফোন করা হয়েছিলো শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানাকে। তাঁকে পর পর কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।