স্টাফ রিপোর্টার :
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পথে লঞ্চে পারাপারের যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। প্রভাবশালী একজন লঞ্চমালিক এবং তার সহযোগিরাই যাত্রীদের হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যাত্রী হয়রানী বন্ধ এবং অভিযুক্তদের নানা অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা আরিচা জোনের সহ-সভাপতি এবং লঞ্চমালিক আব্দুল লতিফ খন্দকার।
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজির হাট নৌপথে মোট ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এই লঞ্চগুলির মধ্যে ২৩টি লঞ্চ যথাযথ নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে চলাচল করছে। কিন্তু লঞ্চমালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামীলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম খানের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১১টি লঞ্চ কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছেন না। তিনি এবং তার সহযোগিরা নির্দিষ্ট সময়ের বেশী সময় ধরে তাদের লঞ্চে যাত্রী উঠাচ্ছেন। অন্যদিকে, তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের সাধারণ লঞ্চব্যবসায়ীদের লঞ্চের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করছে এবং যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে বাধা দিচ্ছে এবং তাদের রাস্তার উপর আটকে রাখছে।
সরেজমিনে যাত্রী হয়রানীর সত্যতা পাওয়া গেছে। এই পথের লঞ্চযাত্রীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন এবং প্রতিকার চেয়েছেন।
লঞ্চমালিক আব্দুল লতিফ খন্দকার বলেন, একটি লঞ্চ ঘাটে কত সময় থাকবে, কোন যাত্রী কিভাবে লঞ্চে উঠবেন এবং কোথায় তাঁরা লঞ্চ পারাপারের টিকিট সংগ্রহ করবেন-তার নির্দেশণা দেওয়া আছে। কিন্তু লঞ্চমালিক ও আওয়ামলীগ নেতা রহিম খানের ছেলে এবং পন্টুন চার্জ ইজারাদার মোস্তফা তার সহযোগিরা যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে বাধা দিচ্ছে এবং তাদের রাস্তার উপর আটকে রাখছে। নিজেদের লঞ্চে যাত্রী উঠনোর জন্য তারা এই অনিয়ম করছে। যারফলে যাত্রীরা প্রতিদিন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, রহিম খানের নিয়ন্ত্রণে থাকা লঞ্চে নির্দিষ্ট সময়ের বেশী সময় ধরে যাত্রী উঠাচ্ছেন। অন্য লঞ্চের নির্দিষ্ট সময়ের ৫-৭ মিনিট আগেই যাত্রীদের আটকে দিচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তির এই আচরণে যাত্রীরা হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ২৩টি লঞ্চের মালিকরা। পন্টুন চার্জ কাউন্টারে যাতে ইজারাদারের কর্মরত কর্মচারীগণ যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে সেই দাবী করেন তিনি।
বেশ কয়েকজন লঞ্চমালিক বলেন, ইজারাদারদের কর্মচারী ইকবাল মল্লিক, মনির হোসেন, আনোয়ার খান, বেলায়েত খান, সিরাজ খান, সুমন খান, আফাজ প্রামানিকসহ আরও কয়েকজন তাদের লঞ্চের সময়সূচী শুরু না হওয়া পর্যন্ত পন্টুন চার্জ কাউন্টারে যাত্রীদের আটকে রাখে। এতে যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়।
তারা বলেন, ইজারাদার পল্টুন চার্জ পল্টুন হতে আদায় না করে পন্টুনের অনেক উপরের রাস্তায় পল্টুন চার্জ আদায় করার ফলে উপরোক্ত কারসাজি করতে পারে।
হয়রানি বন্ধে প্রতিকার চেয়ে ঢাকা বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান, আরিচা বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা, আরিচা নৌ-নিট্রা বিভাগের সহকারী পরিচালক, শিবালয় থানা অফিসার ইনচার্জ, পাটুরিয়া নৌ-থানা, দৌলতদিয়া ঘাট নৌ-পুলিশ ফাড়ি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় কথা বরা সম্ভব হয়নি।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত হযেছেন। কোন লঞ্চে যাতে ধারণ ক্ষমতার বেশী যাত্রী না উঠানো হয় সেটি লঞ্চ মালিকদের নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটে যাতে কোন ধরণের অনিয়ম না থাকে সে ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনয়ি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।