মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গত দুই সপ্তাহ আগে বড় দুই প্রার্থীর মধ্যে যে বিশাল ব্যবধান দেখা গিয়েছিল ক্রমেই তা কমে আসছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বদলে যাচ্ছে সব জরিপের ফল। গত দু’দিনেই কয়েক সপ্তাহের জরিপের বিরাট পরিবর্তন ঘটছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা নিয়ে এতদিনের জরিপ মাঠে মারা যেতে বসেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বাইডেনের কাছাকাছি পৌঁছাতে থাকায়। সোমবার পর্যন্ত টেক্সাসে বাইডেনকে ছাড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প। জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, মিশিগানেও কাছাকাছি এসেছেন ট্রাম্প। পেনসিলভেনিয়ায় বাইডেনের চেয়ে বেশি ভোট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এর ফলে গত নির্বাচনের মতো এবারের চূড়ান্ত নির্বাচনের পর সব হিসাব পাল্টে যেতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলের অঙ্গরাজ্যগুলো-জর্জিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডায় বাইডেনের খুব কাছাকাছি এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিশিগানেও ট্রাম্পের অবস্থান ক্রমান্বয়ে দৃঢ় হচ্ছে। নিউ ইয়র্কের পার্শ্ববর্তী পেনসিলভেনিয়ায় নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ঘনঘন সমাবেশ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
সোমবার প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে এমন আভাস পাওয়া গেছে। জরিপকারী সংস্থাগুলো এখন আগাম ভোটের গতি-প্রকৃতি নজরে রেখেছে। কারণ, ২০১৬ সালের নির্বাচনে যত আগাম ভোট পড়েছিল তার চেয়ে ১৩৩ শতাংশ বেশি ভোট পড়েছে সোমবার পর্যন্ত। এ পর্যন্ত ৬ কোটি ২৭ লাখ ভোট জমা হয়েছে ডাকযোগে এবং আগাম ভোট কেন্দ্রে। অথচ নির্বাচনের বাকি এখনো ৭ দিন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে প্রায় সবাই আগাম ভোটকে নিরাপদ ভাবছেন। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ডাকযোগে ভোট এবং আগাম ভোটের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম কারচুপির জিগির তুললেও তিনি নিজে যেমন আগাম ভোট দিয়েছেন, তেমনই ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রিপাবলিকানরাও লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আগাম ভোট কেন্দ্রে যত মানুষ এসেছিলেন, সে সংখ্যা ২০১৬ সালের মোট সংখ্যার সমান। এরপর পার হলো চার দিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ লাইনে ভোট দিচ্ছেন ডেমোক্র্যাটদের স্টেট নিউ ইয়র্কেও। অনেক আগে সিটিজেনশিপ নেওয়া সত্ত্বেও যারা আগে ভোট কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী ছিলেন না তেমন বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ এশিয়ানদেরও শত শত ভোটারের লাইনে দেখা যাচ্ছে নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভেনিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাসে।
জানা গেছে, ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপে অতিষ্ঠ হয়ে সবাই বাইডেনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বিশেষ করে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে রানিংমেট করায় ডেমোক্র্যাটদের প্রতি এশিয়ানরাও ঝুঁকে পড়েছেন বলে সবার ধারণা। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগাম ভোটের এ ধারা ১ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সালের মোট ভোট ১৩ কোটি ৯০ লাখকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে,গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৩টি স্যুইয়িং স্টেটেই বাইডেন এগিয়ে ছিলেন। করোনায় বিপর্যস্ত আমেরিকানদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ‘করোনা স্টিমুলাস বিল’ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাটদের নানা বাহানায় অতিষ্ঠ স্বল্প আয়ের মানুষ আর ছোট ও মাঝারি তহবিলের ব্যবসায়ীরা। বেকার ভাতার পরিমাণ নিয়ে দর-কষাকষিতে ডেমোক্র্যাটরা অনড় থাকায় এখন পর্যন্ত একটি পেনিও পেলেন না অসহায় মানুষ।
উল্লেখ্য, গত মার্চে করোনা রিলিফ বিল অনুযায়ী ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একেকজন ৬০০ ডলার করে পেয়েছেন ফেডারেল তহবিল থেকে। সঙ্গে যোগ হয়েছে স্টেট থেকে দেওয়া অর্থ। অর্থাৎ একেকজন কমপক্ষে ৮০০ ডলার করে পেয়েছেন প্রতি সপ্তাহে। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা আগস্ট থেকে পুনরায় একইহারে বেকার ভাতার বিল পাস করেন প্রতিনিধি পরিষদে।
অপরদিকে ট্রাম্পের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট চাচ্ছিল সপ্তাহে সর্বোচ্চ সাড়ে চার শত ডলার। প্রথমে তারা তিন শত ডলারের প্রস্তাব দেয়। এরপর ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে দর-কষাকষির এক পর্যায়ে ৪৫০ ডলারে সম্মত হয়।
ডেমোক্র্যাটরা অনড় থাকায় সে আলোচনা ভেস্তে গেছে। এর দায় বর্তাচ্ছে ডেমোক্র্যাটদের ওপর। নির্বাচনে এর প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। গত নির্বাচনে নারী হিসেবে আমেরিকানদের অধিকাংশই (ডেমোক্র্যাটসহ) হিলারি ক্লিনটনকে পছন্দ করেননি।
আর এবার স্প্যানিশ আর কিউবান কৃষ্ণাঙ্গদের বড় একটি অংশ বাইডেনকে পছন্দ করছেন না। ওবামার সঙ্গে টানা ৮ বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট থেকেও অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কার্যত কিছুই করেননি বাইডেন। নির্বাচনের ময়দানে এ অভিযোগ ক্রমে চাঙ্গা হচ্ছে। সর্বশেষ বিতর্কে ট্রাম্পও একই ঘটনার অবতারণা করেছিলেন। যদিও করোনা মহামারীকে যথাযথভাবে মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।এ বিষয়টি ভোটারের মধ্যে সদা জাগ্রত রয়েছে।
নির্বাচনপূর্ব বিভিন্ন জনমত জরিপের তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ অন্য যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ জনমত জরিপে অংশ নেওয়া নিবন্ধিত ভোটারদের ৮৮ শতাংশই জানান, তাঁরা এবার ভোট দেবেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এ হার ছিল ৮৩ শতাংশ। নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা ও বিশ্লেষণকারী ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইটের পূর্বাভাস বলছে, এবার ১৫ কোটি ৪০ লাখের মতো ভোট পড়তে পারে। গেলবার ১৪ কোটি ভোট পড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল ওয়েবসাইটটি।
নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা ও বিশ্লেষণকারী ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইটের পূর্বাভাস বলছে, এবার ১৫ কোটি ৪০ লাখের মতো ভোট পড়তে পারে। গেলবার ১৪ কোটি ভোট পড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল ওয়েবসাইটটি।