পরমাণু সমঝোতা বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল এবং এ কারণেই এটিতে সংশোধনী আনার লক্ষ্যে আবার এই সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। এছাড়া নতুন কোনো আলোচনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের বিরোধী বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট গাই পারমালিনের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। এছাড়া দুই দেশের সম্পর্ককে ঐতিহাসিক ও গভীর আখ্যায়িত করে রুহানি বলেন, দু’দেশের সদিচ্ছা থাকলে এই সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব।
প্রেসিডেন্ট রুহানি দাবি করেন, ইরানকে হুমকি-ধমকি দিয়ে এবং চাপ ও বলপ্রয়োগ করে কেউ কোনোদিন কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এখনও কেবল যৌক্তিক উপায়ে এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমেই যেকোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে তার দেশের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আমেরিকাকে আগে কার্যকরভাবে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপরই কেবল তেহরান তার পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে ফিরে যাবে। বল এখন আমেরিকার কোর্টে; যখনই আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে, তখনই সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে তেহরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মাঝে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় ফেরার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। গত শুক্রবার তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে বাস্তবে, কথায় কিংবা কাগজে নয়। আমরা যখন মনে করব নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে তখন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে আমরা এগিয়ে যাব।
পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ বলে বরাবরই দাবি করে থাকে ইরান
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ছয় পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সমঝোতায় টিকে থাকলেও সমঝোতা মেনে চলার ক্ষেত্রে এসব দেশের ঢিলেঢালা মনোভাব ছিল লক্ষ্য করার মতো।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতায় ফেরার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। তবে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার বিষয়ে তেহরানের অঙ্গীকার করার আহ্বান জানায় ওয়াশিংটন। তবে প্রেসিডেন্ট রুহানির প্রশাসনের দাবি, আগে ইরানের ওপর থেকে সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, এরপরই সমঝোতায় ফিরবে দেশটি। এবিষয়ে উভয় দেশ অনড় অবস্থানে থাকায় পরমাণু সমঝোতায় ফেরা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গবেষণাগারে কাজ করছেন ইরানের এক বিজ্ঞানী
এ অবস্থায় ইরানের পার্লামেন্ট গত ডিসেম্বর মাসে একটি আইন পাস করে। এতে বলা হয়েছে- যদি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া আরও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন স্থগিত করবে ইরান। এছাড়া ইরান সরকারকে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ওই আইনে। নিশ্চিতভাবে এই বিষয়টিকেও ভালোভাবে দেখছে না বাইডেন প্রশাসন।
ইরান অবশ্য বরাবরই দাবি করে থাকে যে, তাদের পামাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। এর বাইরে পরমাণু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিভিন্ন সময়ে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো, মজুত করা ইউরোনিয়াম পরিশোধন করে এর গুণগত মান বাড়ানোসহ বিভিন্ন সংবাদ নিয়মিতই প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে।