এস এম আকরাম হোসেন :
সরকার রপ্তানীমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে এবার কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল নেমেছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাট এলাকায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা। যেখানে বাসে একশ টাকা ভাড়া সেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে গরুর ট্রাকে নিচ্ছে এক হাজার থেকে পনেরশ টাকা করে। অতিরিক্ত ভাড়া না থাকায় অনেকে পায়ে হেটে ঢাকামুখী কর্মস্থলে দিকে যাচ্ছে।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার তিন নাম্বার ফেরিঘাট পন্টুনে এমন চিত্র দেখা যায় সরেজমিনে। যাত্রীবোঝাই করে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার তিন নাম্বার পন্টুনে নোঙর করে বড় ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। ঢাকমুখী যাত্রীর ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ন ছিলো পুরো ফেরি। পদ্মা-যমুনা পারাপারে ভোগান্তি না হলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পড়তে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি। মহাসড়কে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। যে কারণে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি এবং ট্রাক-পিকআপ এবং প্রাইভেটকারে করে গন্তব্যে ছুটছে এসব কর্মমুখী মানুষ। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নিরুপায় হয়ে গন্তব্যে ছুটছে কর্মমুখী মানুষ। ফেরিঘাট এলাকায় নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা। স্বাস্থ্যবিধির কোন বালাই নেই কর্মমুখী মানুষের মাঝে। গন্তব্যে যাওয়ার লড়াইয়ে ব্যস্ত ফেরিঘাট এলাকায় আগত হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিঘাট এলাকার গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক বিউটি আক্তার বলেন, সহকর্মীদের নিকট থেকে জানতে পারলাম রোববার থেকে অফিস খোলা। পরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকামুখী যাত্রী মোহাম্মদ আলী বলেন, পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে গাবতলীর ভাড়া একশো টাকা। প্রাইভেটকারে সেই ভাড়া নিচ্ছে ১৫’শ টাকা। চাকুরী রক্ষার তাগিদে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হেলেনা আক্তার নামের এক পোশাক কারখানার শ্রমিক বলেন, ৫ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন থাকায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে ছিলাম। কারখানা খুলে যাওয়ায় এখন গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। সড়ক-মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কখনো রিকশা-ভ্যান আবার কখনো পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাত্রা করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ গাড়ির চাকা। পরিবার পরিজন নিয়ে হতাশা। করোনা সংক্রামণ ঝুঁকি থাকলেও পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে প্রাইভেট কার নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে সব কিছু ম্যানেজ করে চলতে হয়। সেখানে খরচ আছে। কাজেই বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট বড় মিলে ৮টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে তিনটি ফেরি চলাচল করছে। প্রতিটি ফেরিতে প্রচুর পরিমানে যাত্রী নৌরুট পারাপার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া দুপুরের দিকে কর্মস্থলমুখী গাড়ী না পাওয়ায় যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে উঠে টার্মিনাল ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।