1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মানা হচ্ছে না আইন।

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৩৮৪ বার দেখা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার :

মানিকগঞ্জে জেলার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মানা হচ্ছে না আইন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো নামে মাত্র ভবন ভাড়া নিয়ে গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার বেশির ভাগের নেই লাইসেন্স। হাতে গোনা কয়েকটির লাইসেন্স থাকলেও নেই হাল নাগাদ নবায়ন। আবাসিক ভবন এবং বাণিজ্য ভবনে মোটা অংকের জামানত দিয়ে চলছে এই অবৈধভাবে মানুষ ঠকানোর হাসপাতাল বাণিজ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দশ বেডের নামে আবেদন করা হাসপাতালে রয়েছে বিশ থেকে ত্রিশ বেড। নেই সঠিক জনবল। তবুও চলছে দিনের পর দিন। তবে এসব হাসপাতালের দেখা-শোনা করার কথা জেলা সিভিল সার্জন অফিসের। কিন্তু দেখেও না দেখার ভান করে আছে তারা। এ যেন ঘুমে বিভোর মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস।

আর এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চলছে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালাল দিয়ে। অতিরিক্ত অর্থের লোভে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে এসব বেসরকারি হাসপাতালে।

সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণির ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাও রোগী ভাগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে নির্ধারিত কমিশন পাচ্ছেন। সরকারি আইন অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোর সন্নিকটে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল থাকতে পারবে না। অথচ সরকারি হাসপাতালের আশেপাশেসহ জেলায় অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালগুলো এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করছে রমরমা ক্লিনিক বাণিজ্য। এই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশেরই মালিক ডাক্তার ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, মাসোয়ারা পাওয়ার কারণে চুপ থাকেন সিভিল সার্জন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এই বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এগুলোর অনুমোদন দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সিভিল সার্জন অফিস খোঁজ-খবর না নিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দিতে সাহায্য করে থাকে। ফলে কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা তারা করে না। সর্বত্রই সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি গড়ে ওঠা দালালনির্ভর এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে মানুষ সর্বাস্ব হারাচ্ছে এবং ভুল চিকিৎসায় মারাও যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একশ্রেণির দালাল ও সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে সিন্ডিকেট করেই এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। কোনো কোনো হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স নেই। আবার গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকলেও অন্য ডাক্তার দিয়ে সিজার করানো হচ্ছে। এ কারণে তৃণমূলে ৫০ শতাংশ সিজার হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ। এসব ত্রুটিপূর্ণ সিজারের কারণে মা ও শিশু উভয়ের জীবন পরবর্তী সময়ে বিপন্ন হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক জীবনে তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা কম বলে গাইনি বিশেষজ্ঞরা জানান। সম্প্রতি একটি গবেষণায়ও এ তথ্য বেরিয়ে আসে। সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে টাকার ভাগ পায়, বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির কর্মকর্তারা।

বিভিন্ন সময় র‌্যাব ও জেলা প্রশাসকের ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করেছেন। নামমাত্র দু’একটি প্রতিষ্ঠানে সিলগালা ও নিষেধজ্ঞা করে দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানগুলো সচলই থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহরের আশপাশের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সড়কের দুই পাশে শুধু হাসপাতাল আর হাসপাতাল। আধা কিলোমিটার রাস্তায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬৩টি হাসপাতাল। জেলা সদর হাসপাতালে শত শত রোগী আর দালালে গিজগিজ করে। সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দিকে দৃষ্টি থাকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর। এ জন্য নিয়োগ করা হয়েছে দালাল। রোগী ধরার ফাঁদ পেতে বসে থাকে দালালরা। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর নিজস্ব মার্কেটিং প্রতিনিধি আছে যারা বেতন হিসেবে আবার কমিশন হিসেবে কাজ করেন। দালাল চক্র সকাল থেকেই সরকারি হাসপাতালে শুরু করে জটলা। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দালালরা রোগী ভাগানোর প্রতিনিধি নামে পরিচিত। রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেন তারা। লোভনীয় অফার আর হয়রানি। চলে টানাহেঁচড়াও। অসহায় রোগী আর তাদের অভিভাবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ফাঁদে আটকা পড়েন। হাসপাতালে ভর্তি করার পর শুরু হয় অন্যরকম হালচাল। টাকা আদায়ের যত কলা-কৌশল, চিকিৎসার বালাই নাই। উল্টো আদায় করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে বড় অঙ্কের টাকা। আর এই চিকিৎসা সেবার ভার বহন করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন মূল্যবান অনেক কিছু।

সদর উপজেলার জয়রা এলাকার আসমা আক্তার বলেন, কিছু দিন আগে আমার বোনের বাচ্চা হয়েছে। তখন আমরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম তখন এক খালা আমাদেরকে বলেন, এই সরকারি হাসপাতালে আপনার বোনের চিকিৎসা ভালো হবে না। আমাদের সাথে চলেন আপনাদের অল্প টাকায় ভালো চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করে দিতে পারি এবং আপনার বোন ও বাচ্চা ভালো থাকবেন। পরে তিনি একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। নানা রকমের কথা বলে বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে থেকে টাকা নিতে থাকেন পরে আমরা দেখি তারা আমাদের কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরকম আরো অসংখ্য মানুষ আমাদের কাছে তাদের কষ্টের কথা বলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হাসপাতালের মালিক পক্ষ জানায়, সিভিল সার্জন অফিসের লোকজন আমাদের সমস্ত বিষয় জানে তাদের সাথে সমন্বয় করেই আমরা এই ব্যবসা করি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা.মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, আমি এই জেলায় নতুন এসেছি এর আগে এমন অভিযোগ কেউ করেনি। তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর বিষয়টি দেখবো। তবে আমার অফিসের কেউ যদি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন যদি আমার কাছে কোন প্রমাণ আসে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury