1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে চাঁদার জন্য ১১ দোকান ভাঙার অভিযোগ শ্রমিকলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭৪ বার দেখা হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জ পৌর টার্মিনাল সংলগ্ন ১১টি দোকান ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পাওয়ায় মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খানের নাম ভাঙিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌর টার্মিনাল সংলগ্ন ১১টি দোকান ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকারের আপন ভাগ্নে মো. বিলাস এবং অনুসারি জাতীয় শ্রমিক লীগের জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম নবুর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।

আব্দুস সালাম নবু জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নেরও সভাপতি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. বিলাস এবং নবু দাবি করেছেন পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের আশপাশে যানজট মুক্ত রাখতে এবং লোকাল যানবাহন রাখার জন্য অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানঘর সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌর বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশে ভেঙে দেওয়া পৌর হকার্স মর্কেটের পরিত্যক্ত জমিতে অস্থায়ীভাবে বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান, পানের দোকান, ইসলামী বইয়ের দোকান ও জুতার দোকান বেশি রয়েছে। এসব নিম্ন আয়ের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ পাঁচ থেকে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে করছেন। গত চারদিন আগে নবু ও বিলাসের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন যুবক ভাতের হোটেল মালিক ডিপ্তি, খোরশেদ, মানু, মিঠু, আরিফ, ইউসুফ, সেলিম, প্রবির দাস, সুরাতি–সহ ভ্রম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু ব্যবসার অবস্থা ভালো না থাকায় ব্যবসায়ীরা টাকা দিতে পারেননি বলে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাঁরা নিজেরাই উপস্থিত থেকে ভাসমান ব্যবসায়ীদের দোকানঘর ভেঙে সরিয়ে দেন।

ভুক্তভোগী আরিফ বলেন, ‘মহাসড়ক বর্ধিত হওয়ার কারণে এখানে হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ হওয়া সেই মার্কেটে আমরা দুটি দোকান ছিল। দুটি দোকান উচ্ছেদ হওয়ায় আমি পথে বসে গেছিলাম। পরে হকার্স মার্কেটের খালি জায়গায় আমি চায়ের দোকান বসিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু আজ বাবুল সরকারের লোকজন এসে আমার ছোট্ট দোকানটি ভেঙে সরিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কিভাবে সংসার চালাব বলতে পারছি না।

আরেক ভুক্তভোগী খোদেজা খাতুন বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে এখানে ভাতের দোকান করছি। এতদিন কেউ কিছু বলেনি। বুধবার সকালে নবু পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে এসে যাত্রীবাহী লোকাল গাড়ি রাখার কথা বলে দোকান সরিয়ে নিতে বলেন। নিজেরা না সরিয়ে নিলে তাঁরা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পরে তারাহুরো করে দোকানঘর দোকান সরিয়ে নিয়েছি।
ভুক্তভোগী খোরশেদ আলী বলেন, ‘গত চারদিন আগে নবু এসে আমাদের মতো ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান অনুযায়ী দুই থেকে পাঁচ হাজার করে চাঁদা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে না পারায় আমাদের দোকান ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আর আমরা যেখানে দোকান করছি সেটা হকার্স মার্কেটের জায়গা ছিল এটি পৌর বাস টার্মিনালের জমি না।
বিলাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি গত (মঙ্গলবার) ঘটনাস্থলে থাকলেও আজ উপস্থিত ছিলাম না। জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি আমার মামা বাবুল সরকার বলেছেন পুলিশ সুপারের নির্দেশ টার্মিনালের আশপাশ যানজট মুক্ত রাখতে অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা দোকান সরিয়ে ফেলতে হবে। দোকারঘর ভাঙ্গুক সমস্যা নাই। আপনারা বিকেলে এসে বাবুল সরকারের সঙ্গে কথা বলুন।
বেলা সারে ১২টার দিকে ৮ থেকে ১০জন অনুসারী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় শ্রমিক লীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম নবু। এ সময়ে ভাসমান ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো দোকানঘর সরিয়ে দেই নাই। তারা অবৈধভাবে টার্মিনালের জায়গা দখলে নিয়ে ব্যবসা করছেন। আমি কারও কাছে কোনো টাকা চাই নাই। যদি এমন অভিযোগ থাকে তাহলে যাদের কাছে চেয়েছি তাঁরা প্রমাণ নিয়ে থানায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিক।

চাঁদা চেয়ে না পেয়ে দোকান ভেঙে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘এখানে বাইরের কেউ ব্যবসা করে না, আমাদের লোকাল লোকজন করে। ভাসমান এসব ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা চেয়েছে এটার কোনো প্রমাণ থাকলে আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
পৌর টার্মিনালের ইজারাদার কোরাইশী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধীকারী এম এ ইরাদ কোরাইশী ইমন বলেন, ‘আমি শুনেছি টার্মিনালের আশপাশে যানজটমুক্ত রাখতে এবং লোকাল যাত্রীবাহী যানবাহন রাখতে ভাসমান দোকানগুলো সরানো হয়েছে। তবে দোকান সরানোর ভয় দেখিয়ে কেউ যদি ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে থাকে, সেটা সমর্থন করি না। পৌর টার্মিনালের জন্য নিদিষ্ট কোনো জায়গা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। টার্মিনালের প্রবেশপথ যানজট মুক্ত রাখতে অস্থায়ী দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে দোকান সরানোর বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জেলা হকার্স মার্কেট কল্যান সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান হকার্সদের পুনর্বাসনের জন্য বাসষ্ট্যান্ডে সড়ক ও জনপথের জায়গায় দোকান বরাদ্ধের জন্য পৌরসভাকে দায়িত্ব দেয়। পরে পৌর উক্ত জায়গায় ২২৯ টি টিনসেড আধা পাকা দোকান নির্মান করে হকার্সদের মধ্যে বরাদ্ধ দেন। দোকান মালিকরা ১৯,৫০০/-টাকা নির্মান বাদ পৌরসভার ফান্ডে ব্যাংকে জমা দেন এবং মাসিক ৪০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে আসছিল। এরপর ২০১৮ সালে মহাসড়ক প্রশস্তকরনের জন্য নোটিশ করে দোকানঘর উচ্ছেদ করেন। এরপর থেকে কিছু দোকানদাররা উপরে পলিথিন টানিয়ে দোকান করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এভাবে দোকানগুলো ভেংঙ্গে দেওয়ায় তারা পথে বসেছে।

মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশের নাম ভাঙিয়ে যারা এই কাজ করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury