মেক্সিকো সীমান্তে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে। গত দুই দশকে মেক্সিকো সীমান্তে এত বেশিসংখ্যক অভিবাসীদের জড়ো হতে দেখা যায়নি।
ইতোমধ্যে সীমান্তে জড়ো হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশী অভিভাবকহীন ১৫ হাজার ৫শ শিশুকে হেফাজতে নিয়েছেন মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্যাট্রোল (সিপিবি)। অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মানবিক সংকটও বেড়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, সীমান্তে জড়ো হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক। তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। একইভাবে যেসব পরিবার জড়ো হয়েছে তাদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে যেসব শিশুরা অভিভাবকহীন, তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। সীমান্তে হাজার হাজার অভিভাবকহীন শিশু সীমান্তরক্ষীদের হেফাজতে রয়েছে। তবে তাদের সরকার পরিচালিত যে শিবিরে রাখা হয়েছে সেখানকার পরিস্থিতি অমানবিক বলে দাবি করেছেন সমালোচকরা।
এমন পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়েছে জো বাইডেন প্রশাসন। দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নীতিমালা তৈরিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
সবচেয়ে চাপের মুখে পড়েছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরাকাস। তিনি অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা আসবেন না। সীমান্ত বন্ধ আছে। করোনা মহামারির কারণে এখনো ভ্রমণের সময় আসেনি। বাইডেন প্রশাসন তাদের জন্য উপযুক্ত আবাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে।
গত ২১ মার্চ পর্যন্ত মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্যাট্রোল (সিপিবি) অভিভাবকহীন ১৫ হাজার ৫শ শিশুকে হেফাজতে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পর শিবিরগুলোতে এখনো সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও গত সপ্তাহে শিবিরের ছবি প্রকাশ পায়। তাতে দেখা গেছে, অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে রয়েছে অভিবাসী শিশুরা।
এরপর হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব জেন সাকি বলেন, অভিবাসীদের বসবাসের আরো সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঐসব স্থানে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা লাভের সুবিধা ও আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা এবং অন্যান্য দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। ঐ প্রশাসন অভিবাসীদের প্রবেশে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল। এছাড়া মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু গত জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের পর বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের ওপর থেকে কিছু বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে দেয়াল নির্মাণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল আটকে দেয় বাইডেন প্রশাসন।
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে চলেছে। বসন্তে, গ্রীষ্মে আরো অনেক লোক আসবে। গ্রীষ্ম নাগাদ এই সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছতে পারে। তারা অভিবাসীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করতে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অভিবাসী সংকট নিয়ে কথা বলেন জো বাইডেন। তার দাবি, সীমান্তে মানবিক সংকটের জন্য সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন দায়ী। আর শীতের সময়ে ঐ সীমান্তে অভিবাসী বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। তিনি এসব অভিবাসীদের আসার জন্য তাদের দেশের অবস্থা বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরাধ ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবকেও দায়ী করেন।
চাপের মুখে এই অভিবাসী সংকট মোকাবিলার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে দায়িত্ব দিয়েছেন জো বাইডেন। গত সপ্তাহে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কমলা হ্যারিস জানান, অভিবাসন সমস্যা নিরসনে তিনি হন্ডুরাসের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনায় বসতে চান। এ ক্ষেত্রে মেক্সিকো এবং অন্যান্য দেশের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন তিনি।