মোঃ হাবিবুর রহমান:
মানিকগঞ্জ: তাদের বয়স ৯ থেকে ১১ বছরের মধ্যে হবে। এই বয়সে তাদের হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা থাকলেও দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। বই-খাতা-কলমের বদলে হাতে তুলে নিয়েছে ড্যান্ডি নামক মাদক। মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরলেই নজরে পড়ে পথশিশুদের এই মাদক সেবনের চিত্র। এদের বেশিরভাগই অভিভাবকহীন। পথে দিন, পথেই রাত, পিচ ঢালা এই পথই যাদের ঠিকানা।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) মানিকগঞ্জ বাস্ট্যান্ডের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কয়েকজন শিশুর দেখা। তাদের প্রত্যেকেরই বয়স ৯ থেকে ১১ বছরের মধ্যেই হবে। হাতে পলিথিনের ব্যাগ, আর তার ভেতর ড্যান্ডি নামক মাদক। পলিথিনের ব্যাগ মুখে গুজে শ্বাস নিচ্ছে অনবরত। বিভোর হয়ে যাচ্ছে ড্যান্ডি আঠা নামক ভয়ংকর মাদকের নেশায়। তাদের চেহারার দিকে তাকালে মনেহয় এক্ষুনি বোধহয় মরে যাবে। অভিভাবকহীন এসব শিশুকে একদম গ্রাস করে ফেলেছে ড্যান্ডি নামক এই ভয়াল নেশা। তাদেরকে এই ভয়াল নেশার থাবা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন বোধ করছেন সচেতন মহল। ড্যান্ডি হচ্ছে এক প্রকারের আঠা। যা সাধারনত জুতায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেকোনো হার্ডওয়ারের দোকানে এটি পাওয়া যায়। কোনো প্রকার ভোগান্তি ছারাই মাত্র ৮০ টাকা দামেই মিলছে ড্যান্ডি নামক এই মাদক। ড্যান্ডি মাদকের সিংহভাগ ক্রেতাই পথশিশুরা। স্বল্পমূল্য ও প্রাপ্তি সহজলভ্য হওয়ায় পথশিশুদের নেশার উপাদান হয়ে উঠেছে এই ড্যান্ডি। কৌটা থেকে বের করে পলিথিন ব্যাগে রেখে ঘ্রাণ নেয়ার মাধ্যমে নেশা করে তারা।
মানিকগঞ্জ শহরের পথের ধার, অলি-গলি, কোনা-কাঞ্চিতে বসে এসব পথশিশুরা এ নেশার আসর জমায়। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কয়েকজন পথশিশুকে ড্যান্ডি মাদক সেবন করতে দেখা যায়। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ব্যস্ততম এলাকায় এভাবেই প্রকাশ্যে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে থাকে। নেশা করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুঃখ কষ্ট লাঘবের আশায় তারা নেশা করে বলে জানায়। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্টঁ (শিশু) ডাঃ কিসওয়াল সিলভানা জানান, এ ভয়ঙ্কর নেশার কারণে শিশুদের মধ্যে অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে। এই নেশা গ্রহণের ফলে শিশুরা মানসিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আঠার ঘ্রাণ শরীরের যেসব জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, সেসব জায়গার কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর কোষ নষ্ট হওয়ার কারণে মস্তিষ্কের কাজে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট, লিভার সমস্যা, কিডনি সমস্যা ও অকাল মৃত্যুও হয়।
স্থানীয় সচেতন মহলের কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, পথশিশুরা ড্যান্ডি নামক এ নেশা করার পর তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন তারা চুরি, পকেটমার, হুমকি-ধামকি সহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এদের আটকাতে স্থানীয় প্রসাশনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেন তারা। এছাড়াও ড্যান্ডিকে মাদক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাজার পর্যায়ে সহজলভ্যতা বন্ধের দাবি করেন। এই মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বের করে নিয়ে এসে পথশিশুদের শিক্ষা ও সুষ্ঠু জীবন ব্যবস্থা পরিচালনার পদক্ষেপ নেয়া হলে সমাজের অবক্ষয় দূরীভূত হবে বলে মনে করেন তারা