নাম রঞ্জুরিমা। পেশায় ফটোগ্রাফার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাওড়ার সাঁতরাগাছি স্টেশনে যে দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রত্যক্ষদর্শী। নিজেও আহত হয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফোলা পায়ে বরফ দিতে দিতে মোবাইল ফোনে বললেল, ‘পেছন থেকে একটা জোর ঠেলা এল। তাল সামলাতে না পেরে পা গিয়ে ঠুকে গেল লোহার বিমে।’ রঞ্জুরিমা বললেন, ‘পৌনে ৬টায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপর ফুটব্রিজে তখনই ভিড় জমে ছিল। কিছুক্ষণ আগেই আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন এসে যায়। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। আমি তখন ফুটব্রিজের মাঝখানে, ফুটব্রিজের বিশাল লাইন না এগোয় না পিছায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ লাইনের নিয়মিত যাত্রী। ভিড় থাকে। কিন্তু কোনোদিন এমন পরিস্থিতি হয়নি। আরপিএফ যারা ছিলেন তারা বুঝতে পারছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। ব্রিজের উপরে থাকা আরপিএফ মানুষকে ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মে যেতে বলে। কিন্তু কথা না শোনায় শুরু হয় গালিগালাজ। ঠেলাঠেলি। পর মুহূর্তেই যা মারপিটে পরিণত হয়।’ রঞ্জুরিমা বলেন, ‘এরপর আরও রেল পুলিশ এসে এক নম্বর প্লাটফর্ম থেকে যারা এগোচ্ছিলেন তাদের পিছিয়ে যেতে বলেন। পাঁচ নম্বরের যারা ফুটব্রিজে উঠছিলেন তাদেরকেও পিছিয়ে যেতে বলা হয়। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন পদদলিত হয়। ভিড়ের মধ্যে থেকেই ভিডিও করতে শুরু করি।’
রঞ্জুরিমা দাসের কথায়, ‘এটা সবাইকে জানানোর দরকার ছিল যে এত বড় স্টেশনের কী চরম অব্যবস্থাপনা। ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা বিশাল ধাক্কা।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাল সামলাতে না পেরে ব্রিজের সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ি। পা গিয়ে লাগে লোহার বিমে। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ভিড়ের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারপর ওই অবস্থাতেই পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের লাইন দিয়ে হেঁটে স্টেশনের বাইরে আসতে হয়।’ ‘এ অবস্থা যেকোনো দিনই হতে পারত। একটাই তো ফুটব্রিজ। প্রায়ই শেষ মুহূর্তে ট্রেনের প্লাটফর্ম পরিবর্তন হয়। মঙ্গলবারে ঘটনার পরও রেলের শিক্ষা না হলে আবারও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনায় পদদলিত হয়ে মারা যান দু’জন। আহত হন ১২ জন। তিন নম্বরটা আমিও হতে পারতাম’ বললেন রঞ্জুরিমা দাস। সাঁতরাগাছির দুর্ঘটনা মনে করিয়ে দিল গত বছর মুম্বইয়ের রেল ফুটব্রিজে পদদলিত হয়ে ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনা। আবারও রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সাঁতরাগাছি স্টেশনের আপ ও ডাউন লাইনে একসঙ্গে তিনটি ট্রেন ঢুকে পড়ায় ওভারব্রিজে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ঠেলাঠেলিতে কয়েকজন পড়ে গেলে, তাদের উপর দিয়েই ভিড় চলে যায়। এতে বেশ কয়েকজন পদদলিত হয়। ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরও একজন মারা যান। হাওড়া জেনারেল হাসপাতালে ১২ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।