ফুলকি ডেস্ক : ইরানকে ‘শায়েস্তা করতে’ যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে নানা সমরকৌশলী পদক্ষেপ নিলেও এবার উল্টো চ্যালেঞ্জ পেতে হচ্ছে ওয়াশিংটনকে। যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে ইরান। পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরীর উপস্থিতিকে হুমকি ধরে তেহরান আগামী মার্চে ওই যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
শুক্রবার (৪ জানুয়ারি) ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল তৌরাজ হাসানির বরাত দিয়ে তেহরানের সংবাদমাধ্যম এ খবর জানায়। যুক্তরাষ্ট্র যেমন ইরানকে তাদের শত্রুপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে, তেমনি তেহরানও অর্থনৈতিক অবরোধ-নিষেধাজ্ঞাসহ নানা পদক্ষেপ বিবেচনায় ওয়াশিংটনকে প্রধান শত্রু গণ্য করে।
‘শত্রু শত্রু খেলার’ এই পর্যায়ে ইরানের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের খবর দিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল হাসানি বলেন, ‘এখান থেকে আটলান্টিক মহাসাগর বেশ দূর, সে বিবেচনায় ইরানি নৌবাহিনীর বহর আটলান্টিকে মোতায়েন হতে পাঁচ মাসের মতো সময় লাগবে। তবে ইরানি নববর্ষেই (মার্চে) এই বহর আটলান্টিকের উদ্দেশে রওয়ানা করবে।’
নৌবাহিনীর এ মুখপাত্রের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রশক্তিগুলোর বিচরণস্থল আটলান্টিকে ইরানের নবনির্মিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিধ্বংসী যুদ্ধজাহাজ ‘সাহান্দ’ থাকবে। এই যুদ্ধজাহাজে হেলিকপ্টার অবতরণের ব্যবস্থা, টর্পেডো উৎক্ষেপক, বিমান বিধ্বংসী ব্যবস্থা, জাহাজ বিধ্বংসী অস্ত্র, পানির ওপর থেকে অন্য লক্ষ্যবস্তু এবং সমুদ্র থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা রয়েছে।
এছাড়া সামনের ডিসেম্বরে ইরান তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় একটি মিশনে অংশ নিতে দু’তিনটি যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে বলেও জানান রিয়ার অ্যাডমিরাল হাসানি।
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইরান উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘোরাঘুরির সুযোগ পাওয়ার পরই তেহরানের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা আভাস দিয়েছিলেন, ইরানও মার্কিন জলসীমার কাছে নৌবহর মোতায়েন করতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা-ই ঘটতে চলেছে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা ইস্যুতে উত্তেজনার জেরে গত ক’বছর ধরেই সাগরে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে চলেছে ইরান। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে ইরানি জাহাজকে রক্ষা করতে ভারত মহাসাগর ও এডেন উপসাগরে তারা নৌবহর মোতায়েন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে ইরানের সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর চুক্তির ভিত্তিতে তেহরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ওঠার পর সমঝোতার এ চিত্র নেতিবাচকভাবে বদলাতে থাকে। গত বছরের মে মাসে ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে ইরানের ব্যাংকিং ও জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করলে তেহরান-ওয়াশিংটনের বাকযুদ্ধ তুঙ্গে পৌঁছে।
তখন তেহরানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ইরান যদি তাদের তেল বেচতে না পারে, তবে এই অঞ্চলের অন্য কোনো দেশকেও তেল বেচতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে তারা পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের পারস্য উপসাগর উপকূলীয় দেশগুলো বিদেশিদের কাছে তেল বেচে থাকে হরমুজ প্রণালী দিয়েই।