স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিনা অপরাধে রাজনৈতিক কারণে কারাভোগ করছেন। গণতন্ত্র ও গনতন্ত্রের মানুষকন্যা দেশ নেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। বর্তমানে দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। এদেশের জনগনকে সাথে নিয়ে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করা হবে।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাদ জোহর প্রয়াত মহাসচিবের গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাঁচুরিয়ায় তার কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসয় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রয়াত মহাসচিবের দুইপুত্র খোন্দকার আকবর হোসে বাবলু ও খোন্দকার আকতার হামিদ ডাবলুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মির্জা ফকরুল বলেন, বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ। দৃঢ়তা, অটুট মনোবল এবং ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতায় একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সব সংগ্রামে তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। ১/১১–তে দেশের এক চরম রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব্ব কাঁধে নিয়ে তিনি দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত রুখে দিতে যোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। স্বৈরাচারের কবল থেকে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এর অবদান দল ও দেশবাসী চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোন্দকার দেলোয়ার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার পাঁচুরিয়ায় ১৯৩৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে অনার্স ও ১৯৫৩ সালে মাস্টার্স পাস করেন। ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেলোয়ার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন।
তিনি, মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে ২য়, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাধিকবার চিফ হুইপ ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর খোন্দকার দেলোয়ার বিএনপির মহাসচিব নিযুক্ত হন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরো সময় বিএনপির নানা সংকটে খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনি জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন সরকার জোর করে বিএনপির নেতৃত্ব বদল করতে চাইলেও খোন্দকার দেলোয়ারের জোরালো ভূমিকায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনিই সেই যাত্রায় বিএনপিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন।
বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিলের পর মহাসচিব পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও দেলোয়ারকেই ফের মহাসচিব করা হয়। এর কিছুদিন পর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায়ই তাকে হাসপাতালে যেতে হতো। সেখান থেকেও তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। দেশের ইতিহাসে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, তিনি ছিলেন আপসহীন। ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময় বিএনপির সিনিয়র অনেক নেতাই যখন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তখন রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি বিএনপির ঝাণ্ডাকে একাই তুলে ধরেছেন। এই নিভৃতচারী জননেতা যে এলাকাবাসীর কতটা আপনজন ছিলেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল আরমানীটোলা থেকে মানিকগঞ্জের পাঁচুরিয়া পর্যন্ত শোকার্ত মানুষের বিশাল সমাবেশ। সেখানে দেখা গেছে অশ্রুসিক্ত নয়নে জনতার নীরব মিছিল।