অর্থনীতিবিদ রেজা বলেন, “কৃষকদের ধান ক্রয়ের ব্যাপারে কোনো টাকা নেই। কিন্তু ঋণ খেলাপিদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়ার প্রচুর কোটি টাকা আছে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, যতটুক সহযোগিতা দেখিয়েছেন ঋণ খেলাপিদের, শেয়ারবাজার, আপনি কৃষকদেরকেও যদি সহানুভুতি দেখান তাহলে তাদের অনেক উপকার হতে পারে।”
কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার পেছনে সরকারকে দায়ী করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, “কৃষক ধান বুনে রেকর্ড ভঙ্গ করে উপাদন করেছে। তার মূল্য পাওয়া তো দূরের কথা এখন ধান না কেনাতে তারা বাধ্য হচ্ছে এটাকে পুড়াতে। এই সংকটগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, যখন সরকারের কৃষিনীতি নাই এবং যা তাদের ঘোষণা সেগুলো তারা নিজেরাও মানে না। তারা (সরকার) ধান উৎপাদনের ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন, ধান উপাদন হওয়ার পরে তারা যে কিনে রাখা এবং কৃষকরা যাতে তাদের উপাদনের খরচা তুলে নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। ”
বর্তমান সরকারকে অনির্বাচিত সরকার অভিহিত করে ড. কামাল হোসেন বলেন, “এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তারা যেনতেনভাবে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে। তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। মানুষকে বুঝা দরকার একটা অনির্বাচিত সরকারকে এভাবে বহন করায় সকল মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে।”
ধানের মূল্য কৃষকরা না পাওয়ার বিষয়ে গণফোরাম থেকে কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করে ড. কামাল বলেন, “সংকট উত্তরণের জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। কীভাবে ধান ক্রয় করা দরকার সে বিষয়ে আমরা মতামত রেখেছি।”
ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে সংকট উত্তরণে গণফোরামের পক্ষ থেকে তিন দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন দলটির নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
এগুলো হচ্ছে- অবিলম্বে ইউনিয়ন পর্যায়ে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়, শস্য বহুমুখীকরণ, আধুনিক বাজার ব্যবস্থা চালু করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সরকারি প্রণোদনা প্রদান, দেশের উপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান এব্ং উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানিতে সকল প্রকার শুল্ক মওকুফ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা, শস্য বীমা চালু করা-সহজ শর্তে ও বিনাসুদে বা স্বল্প হারে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান।
আবু সাইয়িদ বলেন, “প্রতি মণ ধানের উপাদন খরচ ৭৪৩ টাকা কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়। লোকসান হচ্ছে কমপক্ষে ১৪৩ টাকা। সরকার এই বছরের মে মাস থেকে ১৩ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে। মে মাসের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও গতকাল পর্যন্ত মাত্র একহাজার ২৬৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করেছে। কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁওসহ বেশিরভাগ বড় বড় মোকামে ধান-চাল কেনা প্রায় বন্ধ রয়েছে। এটা থেকে বুঝা যায় সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, তামাশা করছে।
“সরকার এও বলছে উৎপাদনকারী কৃষকদের সংখ্যা তাদের কাছে নেই। এটা বড় ধরনের মিথ্যাচার। কৃষকের নাম ঠিকানা সরকারের কাছে নেই একথা কি সঠিক? কৃষক ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার পরিসংখ্যান কি গায়েব হয়ে গেছে? মিথ্যাচারের প্রসাদ গড়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।”
প্রকৃত কৃষকদের বদলে শাসক দলের নেতাদের স্লিপে কৃষকদের বেনামে সরকার ধান-চাল ক্রয় করছে বলেও অভিযোগ করেন আবু সাইয়িদ।
খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার যে অজুহাত খাদ্য মন্ত্রণালয় করছে তা খণ্ডন করে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের কৃষক চোর নয়, গুদাম নেই তাতে কি? কৃষকের নিকট থেকে ধান কিনে তাদের গোলায় রেখে দাও।’ জাতির পিতার আস্থা ছিল জনগণের ওপর, বিশ্বাস ছিল দুঃখী মানুষের ওপর। বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।”
কৃষক ও কৃষিখাতের উন্নয়নে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিতে প্রকৃত কৃষক প্রতিনিধি সংযুক্ত করার দাবি জানান রেজা কিবরিয়া।
দলের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ, আমিন আফসারী ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবদুল আউয়াল এসময় উপস্থিত ছিলেন।