আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নিয়ে দলের ভেতরেই চাপে পড়েছেন তিনি। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে বাইডেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিতে কতটা সফল হন এটাই এখন দেখার বিষয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ইতোমধ্যে করেছেন বাইডেন। শিগগিরই তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ারও প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে দলের অভ্যন্তরেই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর চাপের মুখে পড়েছেন তিনি।।
ওবামা প্রশাসনে আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলানো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন নারী। চলতি সপ্তাহে বলেন, পটভূমি পর্যালোচনা প্রক্রিয়া ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবেন। এরপর চূড়ান্ত তালিকার সবার সাক্ষাৎকার নেবেন; যা আগস্টের শুরুতে হতে পারে।
রিপাবলিকান ট্রাম্পকে হারাতে ডেমোক্র্যাটরা মরিয়া হয়ে ওঠায় চলতি বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়নের বিষয়টি বহুলাংশে গুরুত্ব পেয়েছে। আসন্ন ৩ নভেম্বর নভেম্বরের নির্বাচনে কোন প্রার্থী বাইডেনকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করতে পারবেন তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও।
জাতীয় ও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের জরিপে দেখা যাচ্ছে, করোনা মহামারি মোকাবিলা, অর্থনৈতিক মন্দা ও বর্ণবাদী অবস্থানসহ নানা ইস্যুতে এখন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনের প্রতিই বেশিরভাগ আমেরিকান আস্থা রাখছেন। দুজনের মধ্যে পার্থক্যের ব্যবধানও বাড়ছে দিন দিন।
নির্বাচিত হলে জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের সময় বাইডেনের বয়স হবে ৭৮। এর মাধ্যমে সব রেকর্ড ভেঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রবীণ প্রেসিডেন্ট হবেন। ফলে যদি বাইডেন এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকেন তাহলে ২০২৪’র নির্বাচনে তার মনোনীত ভাইস প্রেসিডেন্টই হবেন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
সাবেক সিনেটে নেতা হ্যারি রেইড বলেন, ‘শুধু বাইডেনের বয়স নয়, নানা কারণে এবার ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন মনযোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ বাইডেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা করা এই নেতা বলেন, সম্প্রতি তালিকা কিছুটা কাটছাঁট হলেও তা এখনো অনেক বড়ই রয়ে গেছে।
ওবামা প্রশাসনে আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলানো বাইডেন এবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী
তালিকায় উপরের দিকে রয়েছেন সিনেটর কমলা হ্যারিস, এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ট্যামি ডাকওর্থ; প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ভাল ডেমিংস ও কারেন বাস; সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস, নিউ মেক্সিকোর গভর্নর মিশেল লুজান গ্রিসাম এবং আটলান্টার মেয়র কেইসা লেন্স বোটমস।
প্রেসিডেন্ট পদে প্রচারণা শুরুর পর নাম প্রত্যাহার করা মধ্যপন্থী সিনেটর কমলা হ্যারিস পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। বিশেষ করে সর্বোচ্চ তহবিল সংগ্রহের দিক বিবেচনায়। এছাড়া অনলাইন বাজিকর প্রতিষ্ঠান প্রেডিক্টএলটিতে তার পক্ষে বাজি ৪১ শতাংশের; যা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
রানিংমেট নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দর্শন, বর্ণ, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ছাড়াও কে বেশি তহবিল সংগ্রহ করতে পারবেন, ভোটারদের মধ্যে সাড়া তৈরির সম্ভাবনা কার বেশি এবং ঐতিহ্যগতভাবে প্রেসিডেন্টকে রক্ষায় আগ্রাসী ভূমিকার (অ্যাটাক ডগ) বিষয়সহ আরও নানা কিছুই ভাবতে হচ্ছে বাইডেনকে।
বাইডেনের জাতীয় আর্থিক কমিটির সদস্য অ্যালেক্স হেকলার—যিনি কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেন—বলেন, বাইডেনের মানসিক স্থিতির ঘাটতিসহ ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলেন যনি এর কড়া প্রতিবাদ করে সামলানোসহ প্রয়োজনের প্রেসিডেন্ট এমন একজনই হবেন আদর্শ প্রার্থী।
তবে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড ও বর্ণবাদী বিক্ষোভে বাইডেন সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তা হলো কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে মনোনয়ন। এছাড়া সংক্ষিপ্ত তালিকায় শেতাঙ্গ রয়েছেন শুধু একজন; এলিজাবেথ ওয়ারেন। বাকি পাঁচজন কৃষ্ণাঙ্গ। কমলা হ্যারিসসহ দু’জন এশিয়ান আমেরিকান। একজন লাতিনা।
ব্ল্যাক ভোটারস ম্যাটার নামে একটি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা লা তোশা ব্রাউন বলেন, ‘দেশের যে পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছি তাতে করে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আমি আরও জোর দিয়ে বলতে চাই যে, নিজের রানিংমেট হিসেবে জো বাইডেনের একজ কৃষ্ণাঙ্গ নারীকেই বেঁছে নেওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে বামপন্থীরা ওয়ারেনের সমর্থনে প্রচার চালাচ্ছেন। তাদের যুক্তি, মধ্যপন্থী বাইডেনের সঙ্গে ওয়ারেন যুক্ত হলে তাতে দলের প্রগতিশীলদের মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে বড় কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও কার্যকর হওয়ার পথ পাবে।
চলতি বছর নির্বাচনী বিতর্ক মঞ্চে জো বাইডেনের সঙ্গে এলিজাবেথ ওয়ারেন (লাল) এবং কমলা হ্যারিস (নীল)।
অনেক কৃষ্ণাঙ্গ সমর্থক আবার বলছেন, বর্ণ সমতার প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রচারণার সময় এলিজাবেথ ওয়ারেন তার যেসব নীতির কথা জানান তা ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক কৌসুলিঁ হিসেবে কমলা হ্যারিস এবং ফ্লোরিডার পুলিশ প্রধান হিসেবে ভাল ডেমিংসের চেয়ে অনেক বেশি উদার।
অন্যদের মধ্যে লাতিন বংশোদ্ভূত নিউ মেক্সিকোর গভর্নর গ্রিসামের নাম আসছে আরেক কারণে। বলা হচ্ছে, গ্রিশাম মনোনীত হলে অ্যারিজোনা এবং ফ্লোরিডার মত লাতিন ঘাটিগুলোতে ভালো করবেন বাইডেন। এছাড়া প্রচারণাতেও দেখা যাচ্ছে, এসব অঞ্চলে বাইডেনের অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন।
এছাড়া সামরিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাকওর্থকে বিবেচনা করা হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মধ্য থেকে ভোট আদায়ের চেষ্টা হিসেবে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতেও তার সামরিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে; কেননা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে জাতীয় নিরাপত্তা তথা ভূ-রাজনীতির বিষয়টিও বেশ গুরুত্ব বহন করে।