মো: মহিদ
মানিকগঞ্জ: ষাটউর্ধ্ব সুফিয়া বেগম গেল এক বছর ধরে ক্যনসার আক্রান্ত। হাতে তুলে খেতে পারেন না খাবার। হয়ে পরেছেন কর্মক্ষম, বিছানাতেই শুয়ে-বসে কাটে সময়। সুফিয়া বেগমের স্বামী আবদুস ছামাদ বয়সের ভারে নিজে এখন আর ভারী কাজ করতে পারেন না। স্বামী বাড়ি-বাড়ি খেটে যা পায় তা দিয়ে দুমুঠো ভাতের জোগান দেওয়াই কষ্ট।
অভাব অনটনের সংসারে দিন আনতে যেন পান্তা ফুরোয়। অভাবের দৈন্য দসায় ঠিকমত ওষুধপত্রও খেতে পারেন না। জমানো যে টাকা ছিল তা দিয়ে দুই মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ে দিয়েছেন আর যা বাকি ছিল তা দিয়ে চিকিৎসা করেই শেষ। এখন মাথা গোজার ঠাই এই বাড়িটা ছাড়া কোন জমিজমা নাই। সংসারে সচ্ছলতার জন্য একমাত্র ছেলেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি আরব পাঠিয়েছিলেন, সেও দেশে ফিরে আসে।
সরেজমিনে মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের বড় সরুন্ডী এলাকার সুফিয়া বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুফিয়া বেগম বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে দেখতে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। বিছনার দুই পাশে বসে তারা কথা বলার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু সুফিয়া বেগম বিছানায় অচেতন শুয়ে আছেন। মাঝেমধ্যে ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেয়ে চিৎকার করে উঠছেন। সুফিয়ার ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য সৌদি আরবে মাজরা (কৃষি) ভিসায় পাড়ি জামান তিনি। এতে তার খরচ হয় ৫ লাখ টাকা। কোম্পানির অবস্থা খারাপ হলে দেশে ফিরে আসেন। ওই তিন বছরে খরচের টাকাও তুলতে পারেননি।
দেশে ফিরে আসার পর থেকে কাজের সন্ধান করে যাচ্ছেন। তবে কিছুতেই কোনো কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে না। এদিকে তার মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। মায়ের কষ্টও সহ্য হচ্ছে না। টাকার অভাবে মায়ের ভালো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, মায়ের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এত টাকা তো আমাগো নাই। ক্যাশ টাকা যা ছিল তা দিয়ে এত দিন চিকিৎসা করাইছি।
মায়ের চিকিৎসার জন্য সমাজের ধনী ব্যক্তি ও সরকারের সহযোগিতা কমনা করছি। আবদুস ছামাদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এক বছর ধরে তার স্ত্রী ক্যানসারে অসুস্থ। নিজের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়েছেন। স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর জন্য আত্মীয়স্বজনরাও কিছু সহযোগিতা করেছেন। তবে সেটা যতেষ্ট নয়। এখন পর্যন্ত স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছেন দেড় লাখ টাকার বেশি।
তিনি বলেন, নিজের সাড়ে চার শতকের একটি বাড়ি আছে। আর একটা গরু আছে। সম্পদ বলতে এতটুকুই। দুই শতক কৃষিজমিও যদি থাকত, তাহলে বিক্রি করে স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করাইতাম।
তিনি বলেন, ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসার করানোর পরে স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। কয়েক মাস আগে তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার জরায়ুতেও ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
তবে মাসখানেক ধরে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। নিজে কাজও করতে পারি না, টাকাও কামাই করতে পারি না। এখন টাকার অভাবে স্ত্রীর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। সমাজের ধনাঢ্য ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন আবদুস ছামাদ।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা লাভলী খানম বলেন, সরকারিভাবে ক্যানসার, হৃদরোগে আক্রান্তসহ বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনো রোগী আবেদন করলে যাছাই-বাছাই করে এই সহযোগিতা করা হয়। সুফিয়া বেগমের বিষয়েও তার স্বজনরা পৌরসভা সমাজসেবা অফিসে আবেদন করলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান তিনি।