1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫১ অপরাহ্ন

নির্মাণের দুই বছরেই কোটি টাকার সড়কে ধস,নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের অভিযোগে ঠিকাদারদের জামানতের টাকা আটকে দিয়েছে মানিকগঞ্জ পৌরকর্তৃপক্ষ।

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২
  • ৫৪৪ বার দেখা হয়েছে

এস এম আকরাম হোসেন:
নির্মাণের দুই বছরের মধ্যেই ধ্বসে গেছে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেটের একটি সড়ক। ওই সড়ক ছাড়াও অপর আরেকটি সড়কে নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের অভিযোগে ঠিকাদারদের জামানতের টাকা আটকে দিয়েছে পৌরকর্তৃপক্ষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এর ১নং প্যাকেজের আওতায় ১০টি সড়ক ও একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসেন কন্সট্রাকশন (জেভি) নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্যাকেজের আওতায় পৌর এলাকার তিন নং ওয়ার্ডে নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখন্ডা কালিখোলা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ও নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের দুটি সড়ক নির্মাণ করে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সড়ক দুটির মোট বাজেট ছিল দুই কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার টাকা। কাজ দুটি সম্পন্ন হয় ২০২০ সালে জুলাই মাসে।

পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডের নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখন্ডা কালিখোলা পর্যন্ত নির্মিত ৭৫০ মিটারের আরসিসি রাস্তার বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। রাস্তাটির দক্ষিণ পাশের মাটি সরে গিয়ে রাস্তার নিচে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ঝুঁকিতে রয়েছে রাস্তার অন্তত ১০টি অংশ। এছাড়া রাস্তাটির গাইডওয়ালের পাশ থেকে মাটি নেওয়ার কারণে বেশ কিছু স্থানে ধ্বসে গেছে।

অপরদিকে, নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের কার্পেটিং রাস্তার চওড়া ৪মিটার হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান করেছে তিন মিটারের রাস্তা। আর রাস্তায় মাটি দিয়ে উঁচু করার কথা থাকলেও তা যথাযথভাবে করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েকজন নারী-পুরুষ জানান, অন্যত্র থেকে মাটি এনে এই সাড়ে সাত’শ মিটার রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রেলাকেরা তা না করে, রাস্তাটির পাশের খাদ থেকে মাটি কেটে কাজ করেছেন। যার কারণেই রাস্তাটি ধ্বসে যাচ্ছে। রাস্তা হওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুইবার মাটি দিয়ে ভরাট করার পরও রাস্তার ধ্বস ঠেকানো যাচ্ছে না। বেশ কিছু অংশে রাস্তার নিচে মাটি নেই। এভাবে ধ্বসে যেতে যেতে একসময় রাস্তাটি একসময় ধ্বসে খাদে চলে যাবে বলে ধারণা করছেন তারা।

একই এলাকার আরো কয়েকজন বলেন, রাস্তাটা যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন নতুন মাটি ব্যবহার করা হয়। যারা এখানে কাজ করেছিলেন তারা মাটিকে রোলার দিয়ে ঠিকমত ডলে নাই। রাস্তায় যেখান থেকে কাজ শুরু হয়েছে তার কিছুদূর পরে এসেই বেশ কিছু অংশ দেবে ভেঙে গেছে। যার জন্য গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে চালকদের। রাস্তার অনেক জায়গায় ধস ঠেকানোর জন্য বালু ভর্তি বস্তাও ফেলা হয়েছে।’

৪৫০ মিটারের কার্পেটিং রাস্তা নিয়ে বেশ কয়েকজন বলেন, এই রাস্তার চওড়া হওয়ার কথা ছিল চার মিটার। কিন্তু ঠিকাদাররা করেছেন তিন মিটারের রাস্তা। এতে করে রাস্তাটা অনেক চাপা হয়ে গেছে। বর্ষার সময় যেন রাস্তাটি ডুবে না যায় তার জন্যই এখানে কাজ করা হয়। কিন্তু রাস্তায় মাটি ফেলে উঁচু করার কথা থাকলেও সেখানে নিয়মমাফিক কোন মাটি ফেলা হয়নি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম পুলক বলেন, নিয়ম হলো ঠিকাদারের অধীনে একবছরের মধ্যে রাস্তায় যদি কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে ঠিকাদার সেটা ঠিক করে দিবে। কিন্তু একবছর পর যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তার সমাধান করবে পৌর কর্তৃপক্ষ। ওই একবছরে সেই রাস্তায় ক্ষতি হবার পর আমরা তা ঠিক করে দিয়েছি। বিধায় আমাদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়ার অনুমোদনও দিয়ে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একবছর অতিক্রান্ত হবার আরো একবছর যাওয়ার পরও তারা আমাদেরকে জামানতের এক টাকাও ফেরত দেয়নি।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: রমজান আলী বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা আটকে দেয়া হয়েছে। এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল সাবেক মেয়রের সময়কালে। কিন্তু একবছর হয়ে যাওয়ার পরও ঠিকাদাররা ওই সময়ে তাদের টাকা গুলো নেয়নি। যেহেতু রাস্তাটি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি সেই টাকা দেওয়ার অনুমোদনও করেছিলাম। পরে একদিন ওই এলাকার অনেক মানুষ আমার কাছে এসে রাস্তার কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি সেখানে গিয়ে দেখি রাস্তার বেহাল অবস্থা। পরে, পৌরসভার টিএলসিসি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক দুটির কাজ তদন্ত করতে নয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, এই কাজের জন্য বিল না দেওয়ার চেয়ে বিল দিলেই আমাদের জন্য বেশি সমস্যা হবে। বিল নিতে হলে অবশ্যই ওই বেহাল রাস্তার কাজ করে তা ঠিক করে দিতে হবে। কারণ টাকাতো আমি দিবো না, টাকা দিবে সরকার।

তদন্ত কমিটির প্রধান এবং পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তসলিম মিয়া বলেন, তদন্ত দলের সদস্যদের নিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। খুব শীঘ্রই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিব।

এদিকে, জামানতের টাকা ফেরত পেতে দুদক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে অভিযোগ করেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury