স্টাফ রিপোর্টারঃ
শিক্ষানুরাগী, বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী হারুণার রশিদ খান মুন্নুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মুন্নু ছিলেন বাংলাদেশের একজন সফল শিল্প উদ্যোক্তা। তাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে অনেকেই হয়েছেন বড় বড় শিল্প উদ্যোক্তা। ছাত্র জীবন থেকেই হারুণার রশিদ খান মুন্নু ছিলেন মেধাবী। মেধাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ থেকে হয়ে উঠেন অসাধারণ। বাবার আদর্শ ধারণ করেই এগিয়ে যাচ্ছেন তারই কন্যা আফরোজা খান রিতা। তিনিও হয়ে উঠেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে বাবার ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেকে যুক্ত করেন রিতা। জীবদ্দশায় হারুনার রশিদ খান মুন্নুর চাওয়া ছিল তার অবর্তমানে মুন্নু গ্রুপের হাল ধরবেন বড় মেয়ে আফরোজা খান রিতা। সেভাবেই তিনি তার মেয়েকে গড়ে তুলেছিলেন।
বাবা নেই, তাই তার বাবার স্বপ্নের সঙ্গে নিজের স্বপ্নগুলো এক করে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। বাবার আদর্শ, কর্ম-উদ্দীপনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিজের ভেতর লালন করেছেন বলেই বাবার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মুন্নু ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড, মুন্ন অ্যাটায়ার, মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড মেশিনারি লিমিটেড, মুন্নু বোন চায়না লিমিটেড, মুন্নু প্যাকেজিং লিমিটেড, মুন্নু পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, মুন্নু ক্যাফে অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, মুন্নু সুপারশপ, মুন্নু মেডিকেল কলেজ, মুন্নু মেডিকেল অ্যান্ড হাসপাতাল, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মুন্নু নার্সিং কলেজ, হুরুন নাহার উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্নু আদর্শ বিদ্যানিকেতন, ফিরোজা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতেই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন।
মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর হাতে গড়া এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ পেয়েছেন তাদের কর্মসংস্থান। শুধু তাই নয়, বাবার হাত ধরে বিএনপি’র রাজনীতির দীক্ষা নিয়ে আফরোজা খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। পরপর দুইবার জেলা বিএনপি’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে পিতা হারুনার রশিদ খান মুন্নু সম্পর্কে আফরোজা খান রিতা বলেন, আমার বাবা হচ্ছেন আমার কাছে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ বাবা। মৃত্যুর ৫ বছর হয়ে গেলেও কখনোই মনে হয় না বাবা নেই। একটি মুহূর্তের জন্য তাকে ভুলতে পারি না। বাবা ছিলেন আমার পথপ্রদর্শক, আদর্শ এবং শিক্ষাগুরু। একজন আদর্শবান বাবার সন্তান হিসেবে আমার অহঙ্কারের পুরো জায়গা জুড়ে আছেন আমার বাবা। আমার ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা জীবনে কখনো কোনোদিন বাবাকে অন্যায় করতে দেখিনি এবং কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতেও দেখিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সততা আর আদর্শ ছিল তার একমাত্র পুঁজি। যার কারণে আমার বাবার সুনাম রয়েছে চারদিকে। আফরোজা খান রিতা বলেন, বাবা ছোট বেলা থেকেই আমাদের দুই বোনকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসতেন। মা ছাড়া কখনোই ডাকতেন না। বাবার অভাব আর স্মৃতিগুলো সর্বক্ষণই আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।
আফরোজা খান রিতা বলেন, বাবা চলে যাওয়ার পর মাথার উপর থেকে বটগাছটিও সরে গেছে। এখন একমাত্র অবলম্বন আমার মা। তিনিও আজ অসুস্থ। মা সম্পর্কে শুধু এইটুকু বলতে চাই জীবদ্দশায় আমার বাবার এত উন্নতি ও সফলতার পেছনে আমার মায়ের বিরাট অবদান রয়েছে। যিনি পর্দার আড়াল থেকে বাবাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন। বাবার জীবনে আমার মা আশীর্বাদ হয়ে এসেছিলেন। পিতার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আফরোজা খান রিতা বলেন, বিএনপি’র রাজনীতিতে আমার বাবা ছিলেন একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। রাজনীতি করতে গিয়ে নিজে কখনো অন্যায় করেননি; এমনকি অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপসও করেননি। তার বড় গুণ ছিল তিনি কখনোই নিজেকে নিয়ে ভাবতেন না। তার ভাবনার মধ্যে ছিল মানুষের সেবা করা। ক্ষমতা পেয়ে কখনোই তার অপব্যবহার করেননি। দুর্নীতি ও অনিয়মকে কোনো সময়ই প্রশ্রয় দিতেন না। মানুষের ভালোবাসা ছাড়া তার জীবনে কোনো চাওয়া পাওয়া ছিল না। যার কারণে মানিকগঞ্জের মানুষ তাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসতেন।
বার বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাতেন মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য। মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি: হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুন্নু গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। সকালের সূর্য ওঠার পরপরই মুন্নু সিটিতে প্রতিষ্ঠিত হুরুন নাহার রশিদ জামে মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে মুন্নু গ্রুপের সবগুলো প্রতিষ্ঠান। প্রথমেই শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তার পরিবারের সদস্যরা।
বরাবরের মতো মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৫মমৃত্যুবার্ষিকীতেও মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে বিশেষ চিকিৎসাসেবার আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপী চিকিৎসাসেবায় থাকছে আউটডোর টিকিট ফ্রি, মেডিকেল টেস্ট, হাসপাতালে ভর্তি, ফিজিওথেরাপি এবং সকল অপারেশনের ২৫ শতাংশ ছাড়। ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে মুন্নু মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হবে মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর জীবনী নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা ও দোয়া মাহফিল।
মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আয়োজন করেছে মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর জীবনীর উপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা সহ আরও অনেক কর্মসূচি। মৃত্যুবার্ষিকীতে মুন্নু ফ্যাব্রিক্স লিমিটেডের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কালোব্যাজ ধারণ, নীরবতা পালন, সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণসভা, দোয়া মাহফিল ও কারখানার সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া মুন্নু সিরামিকসহ মুন্নু গ্রুপের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথক ভাবে মুন্নু গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে। পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।