1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন লাকি

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮
  • ৮৩৯ বার দেখা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড় ব্রিজ এলাকা। নীল রংয়ের সালোয়ার কামিজ পরা মধ্যবয়সী এক নারী ছোট লাঠি ও হাতের ইশারায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। দেখে যে কারও মনে হতে পারে লাকি আক্তার নামে এই নারী ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য। কিন্তু তিনি পুলিশের কেউ নন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন লাকি আক্তার। বিনিমিয়ে কারও সাহায্য সহযোগিতা নেন না তিনি। স্থানীয়রা জানান, খালপাড় ব্রিজ এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকে প্রতিদিন। তাদের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা কাজ করেন লাকি। রোদ-বৃষ্টিতেও তার কাজ বন্ধ থাকে না। এই কাজের জন্য কারও কাছে হাত পাতেন না তিনি। এমনকি কেউ তাকে টাকা-পয়সা অথবা খাবার দিতে চাইলেও তা গ্রহণ করেন না। খালপাড় ব্রিজ এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মনির হোসেন জানান, লাকিকে কখনও তিনি বিশ্রাম এবং খাওয়া-দাওয়া করতেও দেখেন না। ব্রিজের ওপরে সারাক্ষণ হাতের ইশারা এবং ছোট একটি লাঠি দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকেন তিনি। কথাও কম বলেন। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তরও দেন না ঠিকমতো। স্থানীয় দোকানদাররা জানান, অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশদের ঠিকমতো পাওয়া যায় না। কিন্তু লাকি তার স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। তার এই কাজ দেখে অবাক হন স্থানীয়রা। লাকির স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কে সুফলও মিলছে। শহরের কয়েকজন হ্যালোবাইক চালক জানান, লাকির সিগন্যালের কারণে খালপাড় ব্রিজ এলাকায় ছোটখাটো দুর্ঘটনা এবং যানজট পরিস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। মানিকগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) ফারুক হোসেন জানান,একজন প্রশিক্ষিত লোকের মতোই লাকি ট্রাফিক সেবা দিচ্ছেন। এর বিনিমিয়ে তিনি কখনও তাদের কাছে কিছু চান না। তবে মাঝে মধ্যে কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্যরা তাকে খাবার দিয়ে থাকেন। তার স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারও অবগত আছেন। তিনি মনে করেন লাকি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তা নয়তো কোনো বেতন-ভাতা ছাড়াই এভাবে কাজ করতেন না। অনেক চেষ্টার পর কথা হয় লাকি আক্তারের সাথে। কাজ বাদ দিয়ে তিনি কোনো কথাই বলতে চাচ্ছিলেন না।একটি দুটি কথা বলেই আবার যানজট নিয়ন্ত্রণে ছুটে যাচ্ছিলেন। তবে তার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন। লাকি আক্তার জানান, ট্রাফিকের এই কাজ তিনি নিজেই নিয়েছেন। কেউ তাকে এখানে এনে দেননি। এটা তার চাকরি এবং এই কাজ করতে তার ভালো লাগে।

তিনি জানান, তার বাবাও পুলিশে চাকরি করতেন। বাড়ি ঘর নদীতে ভেঙে গেছে। বাবার চাকরির জমানো টাকা তুলে নিজে একটি বাড়ি করবেন। খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে লাকি জানান,আগে তো সারাদিন শুধু পানি খেয়ে থাকতাম। এজন্য প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তাই রোজার ঈদের পর থেকে চিড়া নয়তো মুড়ি নিয়ে আসি। সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে রান্না করে খাই। এর বেশি আর কিছু বলতেই রাজি হননি এই স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক। খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, লাকি আক্তারের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামে। তার বাবা তফিজ উদ্দিন শিকদার পুলিশ সদস্য ছিলেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে লাকি ছিলেন সবার ছোট। ছোট বেলায় বাবা-মা মারা যান। বিয়ের ৯ মাসের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান লাকির স্বামী। ধলেশ্বরী নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে তাদের বসতভিটা। এরপর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। তবে তিনি পুরোপুরি অসুস্থ নন। স্থানীয়রা বলছেন, বাবার পেশাকে ভালোবেসে আর দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর কথা ভেবে সড়কে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন লাকি। সারাদিন শহরে ট্রাফিক সেবা দেয়ার পর গ্রামে ফিরে আসেন লাকি। লাকির ফুফাতো বোন হাজেরা বেগম জানান,মানিকগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান তাকে একটি টিনের ছাপড়া ঘর তুলে দিয়েছেন। সেখানে একাই বসবাস করেন লাকি। শহরের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনি তিনি ফজরের আজানের সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury